আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
হামাস ও ইসরাইলের চলমান সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে মিশরের কায়রোতে একটি শান্তি সম্মেলন শুরু হয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন ইতালি ও গ্রিসের নেতারা।
শনিবার (২১ অক্টোবর) এই শান্তি সম্মেলনে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই গাজায় ইসরাইলি হামলা থামাতে হবে এবং সংকটের সমাধানে এমন একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যার মাধ্যমে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ সুগম হয়।
অন্যদিকে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিতসোতাকিসও বলেছেন, নতুন একটি শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে যেখানে ইসরাইলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকেও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখা হবে।
এই শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করেছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি । এতে বিভিন্ন দেশের নেতা ও কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন।
শনিবার (২১ অক্টোবর) কায়রোর এই শান্তি সম্মেলনে জর্ডান, জার্মানি, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও এই সম্মেলনে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারাও যোগ দিয়েছেন।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই গত সাত দশক ধরে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের কথা বলে আসছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। হামাসের অভিযানের পর সৃষ্ট নতুন সংঘাতের পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসছে।
গাজা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলে হামাসের আকস্মির অভিযানের পর ফিলিস্তিনে নতুন সংঘাত শুরু হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির ওই হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় নজিরবিহীন আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। যার ফলে এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও ১৩ হাজার আহত হয়েছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে আরও কয়েক হাজার।
উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে গত সপ্তাহে ‘ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যত’ নিয়ে আলোচনার জন্য এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহ্বান জানায় মিশর। মিশরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি বলেন, এই সম্মেলন গাজা উপত্যকায় উত্তেজনা হ্রাস ও মানবিক সহায়তা সরবরাহে একটি ‘আন্তর্জাতিক সম্মতি’ চাইবে।
টানা দু-সপ্তাহের অবরোধে আটকে থাকার পর অবশেষে রাফা ক্রসিং দিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে ত্রাণবাহী ট্রাক। তবে মাত্র ২০টি ট্রাক গাজার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি উপস্থিত নেতাদের গাজা উপত্যকায় ‘মানবিক বিপর্যয়’র অবসান ঘটাতে এবং ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তির পথ খুঁজে বের করতে একটি রোডম্যাপ তৈরির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছার আহ্বান জানান।
রোডম্যাপের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজায় ত্রাণ বিতরণ, একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ বের করা।
সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, ‘সব বেসামরিক মানুষের জীবনই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যখন এখানে কথা বলছি, তখনও গাজায় বিরামহীন বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। এটা যেকোনো বিচারে নিষ্ঠুর ও অকল্পনীয়। এটা অবরুদ্ধ ও অসহায় মানুষের ওপর সম্মিলিত শাস্তির সমান। এটা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা যুদ্ধাপরাধ।’
অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘যেখানেই হোক বেসরকারি অবকাঠামো আক্রমণ করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে মানুষকে বঞ্চিত নিন্দা হয়। (এসব কর্মকাণ্ডের) জবাবদিহি থাকে। কিন্তু গাজায় নয়।’
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সম্মেলনে যোগ দিয়ে গাজায় মানবিক করিডোর খুলে দেয়ার কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিরা গাজা ছাড়বে না। আমরা আমাদের জমিতেই থাকব।’
তবে এই সম্মেলনে ইসরাইলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি যোগ দেননি। আসেননি ঊর্ধ্বতন কোনো মার্কিন কর্মকর্তাও। ফলে যে লক্ষ্য অর্জনে এই সম্মেলন তার প্রত্যাশা অনেকটাই কমে গেছে। আল জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেস বলেছেন, এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রস্তাব করার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে ইসরাইল কি সেই রোডম্যাপের কথা শুনবে?