বাণিজ্য ডেস্ক :
আমদানি করা ৩৮ ধরনের পণ্য অফডকের পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি ডেলিভারি নেয়ার অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। এতে মুখোমুখি অবস্থানে বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ৩৮ ধরনের পণ্য বন্দর থেকেই ডেলিভারি নেয়ার অনুমতি দিয়ে চিঠি ইস্যু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। আমদানি করা কনটেইনারগুলো অফডকে না পাঠানোর এ সুবিধা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা চিঠিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্টরা কাস্টমসের কাছে আবেদন করেছেন যে তারা যেন ডিপোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তর থেকেও এ ৩৮ পণ্যের ডেলিভারি নিতে পারে। সেক্ষেত্রে কাস্টমস টাইম টু টাইম তাদের একটি অনুমতি দেয়। কিছু দিন আগেও কাস্টমস তাদের এ অনুমতি দিয়েছিল- যেটি ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের অনুরোধে কাস্টমস সেটি বাড়িয়েছে।
অবশ্য ২০১৮ সাল থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েক বার সি অ্যান্ড এফ এজেন্টদের এই সুবিধা দিয়েছে।
দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে ১৯টি অফডক চালু করা হয়েছিল। তারপরও আমদানি করা ৩৮ ধরনের পণ্য বন্দরের অভ্যন্তরে খালাস হচ্ছে।
কাস্টমসের এ সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা করে প্রাইভেট আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডা বলছে, এতে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যে অফডকগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, তার যে আর্থিক রিটার্ন, সেটি কিন্তু আসছে না। কারণ এ ভলিউম আমাদের এখান থেকে ডেলিভারি করা হলে আমরা যে রাজস্ব পেতাম, আমরা বর্তমানে সে রাজস্ব পাচ্ছি না। আমর সে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বলা হচ্ছে যে এ ৩৮ পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি নিতে গেলে আমদানিকারকের লজিস্টিকস ব্যয় কম হয়। আমাদের এখান থেকে নিতে গেলে যে লজিস্টিকস ব্যয় হয়, তা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নিতে গেলে অপেক্ষাকৃত কম হয়। এ কারণ দেখিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পণ্যগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে।
এতে লোকসানের পড়তে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে সমস্যা হচ্ছে, আমরা যে বিনিয়োগ করেছি, এ ৩৮ ধরনের পণ্যের জন্য আমাদের যে লজিস্টিকস এ্যারেন্জমেন্ট আছে, আমরা সেটি পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছি না। ফলে বিনিয়োগ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠিক তেমনি বিনিয়োগের বিপরীতে আমি আমার রিটার্নও পাচ্ছি না।
এদিকে সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, বন্দরের জট নিরসন ও আমদানিকারকদের সময় বাঁচানোর জন্য দুই দশক আগে অফডক চালু করা হয়। কিন্তু নানা জাটিলতায় অফডকগুলো সময় মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সি অ্যান্ড এফ অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেন, দেশের সরবরাহ লাইনকে চালু রাখার জন্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাঁচামালের সরবরাহ সচল রাখার জন্য আমি যেখান থেকে আগে পণ্য পাব, আমি সেখান থেকেই নিবো। এটিই দেশ ও জাতি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য সাশ্রয়ী।
চট্টগ্রামের সি অ্যান্ড এফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আকতার হোসাইন বলেন, বন্দরকে যানজটমুক্ত রাখার জন্য পণ্যগুলো জাহাজ থেকে নামানোর পর পর আমরা নিয়ে যাচ্ছি। আমরা আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে আছি। কারণ বন্দরে চার্জ কম এবং তাৎক্ষণিক ডেলিভারি নিলে আমাদের আর অফডকে পণ্য নিতে হচ্ছে না।
বছরে ১০ লাখের বেশি কনটেইনার জাহাজীকরণ প্রক্রিয়া ১৯টি প্রাইভেট আইসিডি সম্পন্ন করে। এর মধ্যে আমদানি করা ৩৮ পণ্যের পাশাপাশি রফতানিমুখী শতভাগ পণ্যের জাহাজীকরণ এখানে সম্পন্ন হয়।