হোম খুলনাঝিনাইদহ কালীগঞ্জ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রেহেনার বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য

কালীগঞ্জ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রেহেনার বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 75 ভিউজ

ঝিনাইদহ অফিস :

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা রেহেনা দীপ্তি পেনশনে যাওয়া শিক্ষকদের নিকট থেকে তিন শত টাকা থেকে শুরু করে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত ঘুষ বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্যের একাধিক তথ্য প্রমানাদি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা উপজেলার সব সরকারি দফতরের কাজে উৎকোচ গ্রহন করেন এমন সংবাদ উপজেলার অফিস পাড়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন পরিনত হয়েছে । বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের যাবতীয় কাজে তিনি উৎকোচ দেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি করেন কখনো সরাসরি শিক্ষক কখনোবা শিক্ষকনেতার সাথে । প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণ অবসর গ্রহনের পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে তাদের যাবতীয় পাওনাদি সংক্রান্ত ফাইল প্রস্তুত হয়ে যখন হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা রেহেনা দীপ্তির টেবিলে যায়, তখন তিনি ওইসব ফাইল মোটা অংকের উৎকোচ তথা ঘুষের বিনিময়ে পাস করে থাকেন।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের পি আর এল এ থাকা অবস্থায় বেসিক বেতন সংক্রান্ত কাজ, জিপি ফান্ড, লামগ্রান্ড, গ্রাচুইটি ও পেনশন এর যাবতীয় কাজের জন্য তিনি আলাদা আলাদাভাবে টাকা আদায় করে থাকেন।চাকরিরত অবস্থায় মৃত শিক্ষকগণের পাওনাদি যেমন- যৌথ বীমা, কল্যাণ তহবিল ও দাফন-কাফন বাবদ বিল পাস করতেও ঐসব অসহায় পরিবারের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নেন রেহেনা দীপ্তি। তিনি অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের নিকট থেকে খাতওয়ারি দশ শতাংশ থেকে পনের শতাংশ পর্যন্ত টাকা নেন বলেও ভুক্তভোগীরা জানান।

কালীগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের মধ্যে ৮০ টি জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সাবেক রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়) রয়েছে। এসব বিদ্যালয়সমূহের অধিকাংশ শিক্ষক টাইম স্কেল নেন নিয়ম বহির্ভূতভাবে। প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি উপজেলার মাসলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান তৎকালীন সময়ে শিক্ষকদের সঠিক পরামর্শ না দিয়ে তাদের নিকট থেকে চাদা তুলে সংশ্লিষ্ট অফিসে অর্থ খরচ করে এরিয়া বিলসহ টাইম স্কেল করিয়ে দেন।ওই সময় থেকে টাইম স্কেলের বেতন এবং এরিয়া দীর্ঘদিন নব্য জাতীয়করণ বিদ্যালয়মূহের শিক্ষকগণ ভোগ করলেও গত কয়েক বছরে নব্য সরকারিকরণ বিদ্যালয়সমূহের যেসব শিক্ষকগণ অবসরে যাচ্ছেন তাদেরকে এখন চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে হিসাবরক্ষণ অফিসে নিজ নিজ ফাইল পৌঁছালে। এক্ষেত্রে শিক্ষক নেতা মিজানুর রহমান আবার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের সাথে টাইম স্কেলের টাকা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার মাধ্যমে কম কাটানোর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঐসব শিক্ষকদের নিকট থেকে পুনরায় আলাদাভাবে চুক্তিও করেন বলে অভিযোগ করেন অনেক শিক্ষক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অবসর গ্রহণকারী ভুক্তভোগী শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে তাদের পাওনাদির ফাইল হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার টেবিলে গেলেই আটকে যায়। টাকা ছাড়া ছাড় হয় না সে ফাইল।

রাখালগাছি ইউনিয়নে অবস্থিত একটি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক বলেন, আমি কয়েকবারে সর্বমোট ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার নিকট থেকে আমার সমস্ত পাওনাদি ছাড় করিয়েছি।নিজে হাতে টাকা দিয়েছিলাম রেহেনা ম্যাডামকে। একই ইউনিয়নের আরেকটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জানান, রেহেনা আপা আমার কাছ থেকে অবসরকালীন সব পাওনাদির জন্য ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। ঘুষের এই টাকার ব্যাপারে আমি তার নিকট জানতে চাইলে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, এই টাকার ভাগ সবাইকে দেওয়া লাগে। সম্প্রতি উপজেলার প্রায় শতাধিক শিক্ষকের ডিপিএড স্কেল এর কাজ সম্পূন্ন করার জন্য শিক্ষকদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ৩০ হাজার টাকা নেন রেহেনা দিপ্তী ।সদ্য অবসরে যাওয়া একজন শিক্ষকের পি আর এল এর কাজ করার জন্য টাকা চাইলে ঐ শিক্ষক মাত্র ৩ শত টাকা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে দেন। সামান্য এ টাকাও তিনি নিজ হাতে গ্রহণ করেন। অনেক ক্ষেত্রে রেহেনা দীপ্তি ঘুষের টাকা গ্রহণ করার পর শিক্ষকগণের নিকট থেকে নিজের মোবাইল ফোনে ঘুষ না নেওয়া মর্মে ভিডিও চিত্র ধারণ করে নেন বলেও জানান এক ভুক্তভোগী শিক্ষক। কোনো শিক্ষক দাবীকৃত ঘুষের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তার ফাইল পাস হয় না এবং ঐ শিক্ষককে নানাভাবে করা হয় হয়রানি। এভাবে প্রতিনিয়ত শিক্ষকদেরকে জিম্মি করে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে গেলেও তার টেবিলে কাজ আটকে যাওয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না। যে কারণে দীর্ঘ দিন যাবত বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রেহেনা দীপ্তি।

কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমানের সাথে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জিম্মি করে হিসাব রক্ষণ অফিসের যোগসাজসে তাদের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান , আমি নিজে এই ধরনের কোন কাজের সাথে জড়িত নয়। তবে টাইম স্কেল করার সময় মিষ্টি খেতে অফিসে কিছু খরচ দিয়েছিলাম। শিক্ষকদের সব ধরনের হয়রানি বন্ধে মিটিং করে তাদেরকে বলা হয়েছে কেউ টাকা চাইলে জানানোর কথা।

ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগের ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা রেহেনা দীপ্তির নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ৩০ টা মন্ত্রণালয়ের এই উপজেলায় কাজ আমি করি। আমি অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহনের ব্যাপারে একশ সাংবাদিক নিয়ে চ্যালেঞ্জ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন