হোম খুলনাসাতক্ষীরা কালিগঞ্জে সুনীল মণ্ডলের জমিতে হামলা: লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা

কালিগঞ্জে সুনীল মণ্ডলের জমিতে হামলা: লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 32 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল বাজারে সুনীল মণ্ডলের জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে বাঁশের বেড়া দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক ফলজ ও বণজ বৃক্ষ কেটে সাবাড় করে লুটপাটসহ ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুনীল মণ্ডলের স্ত্রী মাধবী রানী মণ্ডল বাদি হয়ে গত রবিবার কালিগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।

মামলায় একই গ্রামের বেলায়েত গাজীর ছেলে সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীরসহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে।

মামলায় ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, একই গ্রামের আব্দুস সামাদ গাজী (৬৫) ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের (৪৫) সাথে তাদের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ও মামলা রয়েছে। আসামী আব্দুস সামাদ গাজীর বিরুদ্ধে ১৯৮৯ সালের ২৯ জুলাই জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে নিজের বিমাতা ভাই আব্দুল গফুর গাজীর দুই ছেলে ও ১৯৯০ সালের ২৩ মে নিজের বিমাতা ভাই আব্দুল গফুর গাজীর আরো এক ছেলেকে খুন করার অভিযোগে মামলা হয়। এছাড়া চম্পাফুল গ্রামের এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ২০২০ সালে জেলে যান আসামী সামাদ গাজী। ২০২০ সালে ভাইপোকে হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী সাইহাটি গ্রামের রোমেছা খাতুন ও তার ছেলে আবু সাঈদকে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ রয়েছে সামাদ গাজীর বিরুদ্ধে। যদিও সামাদ গাজীর হুমকিতে তিন ভাইপো হত্যার ঘটনায় দুটি মামলার বাদি মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন। ফলে ১নং আসামী ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

গত ১৮/০৮/২০২৫ সালের ১৮ আগষ্ট সকাল ৬টা থেকে তারিখ সকাল থেকে ২৭ আগষ্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১নং ও ২ নং আসামীর নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন ভাড়াটিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাদের দখলীয় ও পৈতৃক জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে জমিতে তাদের(মাধবী) লাগানো নরিকেল, তাল, সুপারী, বেল, আম ও কলাগাছসহ কমপক্ষে ১০ প্রজাতির শতাধিক গাছ কেটে, ফল ও সবজি মিলিয়ে তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করা হয়। বাড়ির জিনিসপত্র লুটপাট করে। তুলসী বেদী ভাংচুর করে। জমির চারিদিক,বাড়ির উঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে জমি জবরদখলের জন্য তাদেরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় তার ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের হুমকি দেয়। শত শত নারী ও পুরুষ ঘটনা দেখলেও প্রভাবশালী ও হিংস্র সামাদ গাজীর ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। গত ১৯ আগষ্ট গাছ লুটপাট চলাকালে জীবন বাঁচানোর জন্য কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন।

এ ঘটনায় উচ্ছেদ মামলার বিবাদী সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. তরুন বন্দোপাধ্যায় কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে তাদের (মাধবী) চার বিঘা জমি আলমগীর কবীরের দখল দেখিয়ে পুলিশ তাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করেন। একতরফা শুনানী শেষে আদালত ওই দুই পুলিশ সদস্যকে আগামি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বশরীরে আদালতে এসে কারণ দর্শাণোর নির্দেশ দেন। ২০ আগষ্ট ওই পুলিশ সদস্যরা আদালতে এসে কারণ দর্শাণ। এতে পুলিশের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত তিন বিঘার মধ্যে আড়াই বিঘা জমি নিয়ে এডিসি (রাজস্ব) আদালতে থাকা মামলায় (৫৭/২৩) গত ২৭ আগষ্ট শুনানী শেষে সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরকে ওই জমিতে কোন ধরণের কাজ কর্ম বন্ধ রাখাসহ স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেয়া হয়।

আদালতের নোটিশ পাওয়ার পরও গত পহেলা সেপ্টেম্বর সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীর ওই জমিতে আবারো লুটপাট চালায়। গত ২ সেপ্টেম্বর আনুমানিক দিবাগত রাত দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে অর্থাৎ ৩ সেপ্টেম্বর তাকে (মাধবী) ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে থাকাকালিন কে বা কাহারা বসতবাড়ি সংলগ্ন কাঠঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তিনি সকলকে ডেকে তোলেন। তিনি ও পরিবারের সদস্যরা বাড়ির পুকুর ও টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভিয়ে ফেলেন। আগুন নেভানোর সময় তাদের চিৎকারে কালীবাড়ি বাজারের নৈশপ্রহরী নারায়ন অধিকারী, হাবিবুর রহমান, ও পরিতোষ নন্দিসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ৩ সেপ্টেম্বর ভোর সোয়া তিনটার দিকে আগুন নেভানো সম্ভব হয়। আগুনে পুড়ে কাঠসহ কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যায়। তার আশঙ্কা পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে উচ্ছেদের মামলার (দেঃ ৪৮৮/২১) রায় ঘোষণার আগেই সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরসহ তাদের ভাড়াটিয়া লোকজন রাতের আঁধারে তার কাঠঘরে আগুন লাগিয়ে পরবর্তীতে বসতঘরে শুয়ে থাকা তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল।

প্রসঙ্গত, সহিংসতার এতই ব্যপ্তি ছিল যে, অসহায় সুনীল পরিবারের বাড়িতে ছুঁটে আসেন জেলা ওলামা দল, জেলা জামায়াত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কল্যাণ ফ্রণ্ট, জজ কোর্টের পিপি ও মানবাধিকার কর্মীরা।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুকিত হাসান খান জানান, লুটপাট, ভাঙচুর, জমি দখলের চেষ্টা ও কাঠের ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মাধবী মণ্ডল বাদি হয়ে রবিবার একই গ্রামের সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের নাম উল্লেখ করে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩৪২, ৪৪৭, ৪৩৬, ৩৭৯ ও ৫০৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তভার কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সমীর গাইনের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন