নিজস্ব প্রতিনিধি:
কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করো এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বিশ্ব নিশ্চিত করার দাবিতে বিডাবলুজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইকোলোজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ক্লীন (কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভার্মেন্টাল একশন টেওয়ার্ক) এবং স্বদেশ এই তিনটি সংগঠনের আয়োজনে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাইতে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৮ এর সভায় অংশগ্রহণকারী বিশ^ নেতৃবৃন্দের কাছে ২৮ নভেম্বর, ২০০৩ সোমবার সাতক্ষীরা শহিদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়েগের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে প্রতিকী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরা শহিদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে অনুষ্ঠিত প্রতিকী প্রদর্শনীতে আগামী প্রজন্ম ও পৃথিবী বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানি, কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে শতভাগ বিনিয়োগের দাবিতে বক্তব্য রাখেন, শিক্ষাবিদ ফজলুল হক, মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য আবদুস সামাদ, ভূমিহীন নেতা কওসার আলী, নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উন্নয়নকর্মী সরদার গিয়াস উদ্দীন, সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী ফারুক রহমান, যুব অধিকারকর্মী জয় সরদার, কৃষি অধিকারকর্মী রাহাত রাজা, সাংবাদিক ইয়ারুল ইসলাম, কলেজ শিক্ষার্থী শিহাব, হাফিজুর রহমান, উন্নয়নকর্মী মফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রতিকী প্রদর্শনীতে বক্তারা বলেন, বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও জাতিসংঘ জলবায়ুু পরিবর্তন কর্মকাঠামো সনদে আগামী ৩০ নভেম্বও থেকে ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে ‘কপ-২৮’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনের প্রকৃত নাম ‘জলবায় সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রীয় পক্ষসমূহের সম্মেলন’ ‘কপ’ হলেও সাধারণভাবে ‘জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন’ নামে পরিচিত। ১৯৯২ সালের ধরিত্রী সম্মেলনে জাতিসংঘ জলবায়ু সনদ গৃহীত হবার পর ১৯৯৫ সালের মার্চে জার্মানির বার্লিন শহরে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ‘কপ-২৮’-এ পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান, বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর প্রধান, বিজ্ঞানী, জলবায়ু-অধিকারকর্মী, সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই সম্মেলনে মিলিত হবেন। কিন্তু সম্মেলনে কতটুকু কার্যকর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় অধিকাংশ সিদ্ধান্তই যথাসময়ে ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয় না। এ কারণেই জলবায়-কর্মীদের দাবি ‘ঐচ্ছিক সমঝোতা নয়, আইনগত চুক্তি চাই’।
২০১৫ সালে সম্পাদিত প্যারিস চুক্তি অনুসারে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার শিল্পবিপ্লবের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রত্যেক শে প্যারিস চুক্তি অনুসারে কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অঙ্গীকার’ বা ‘এনডিসি’ পেশ করেছে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তসরকারি প্যানেল বা আইপিসিসির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনডিসি অনুসারে নির্গমন কমালে ২০৫০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ৩.৬ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং, বর্ধিত ও উচ্চাকাক্ষী এনডিসি প্রণয়ন করে শিল্পোন্নত শেগুলোর নির্গমন ব্যাপক হারে কমাতে হবে। জিসিএফ থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রেও রয়েছে চরম বৈষম্য। জিসিএফ থেকে প্রশমন খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৯১ শতাংশ অর্থ। এর বিপরীতে অভিযোজন খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ যা জলবায়ু-বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতি চরম অবজ্ঞার নামান্তর। এছাড়া, বাংলাদেশের মত চরম বিপদাপন্ন দেশে এ পর্যন্ত বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ৩৭.৪ কোটি ডলার। অথচ, জিসিএফ-এর উদ্দেশ্যই ছিলো বিপদাপন্ন দেশগুলোর জলবায়ু ঝুঁকি কমানোয় অর্থায়ন ব্যবস্থা করা। বর্তমান অর্থায়ন কাঠামো জিসিএফ-এর মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
দাবিসমূহ নিন্মরূপ: ১. ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্গমন ২০০৫ সালের তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কমাতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘নেট জিরো’ নয়, প্রকৃত’ ‘শূন্য নির্গমন’ চাই। ২. উন্নয়নশীল ও উন্নত শে নির্বিশেষে ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পখাতে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কার্বন ধারণ ও সংরক্ষণ বা সিসিএস প্রযুক্তি ব্যবহারের দোহাই দেয়া যাবে না। ৩. জীবাশ্ম গ্যাস (এলএনজিসহ) ও পেট্রোলিয়ামে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সরবরাহ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। রূপান্তরকালীন জ্বালানির নামে এলএনজি’র সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে। ৪. স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিপদাপন্ন জনসাধারণের জলবায়ু অভিযোজনের জন্য সরাসরি অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে হবে। ৫. এলএনডি তহবিলে ঋণ কিংবা বেসরকারি বিনিয়োগ নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এলএনডি তহবিলে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করতে হবে। ৬. বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুত ও ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে এবং সহজ অর্থায়নের মধ্য দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে হবে। ৭. শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে জিসিএফ-এ প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার দিতে হবে যাতে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু-ঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত হয়। ৮. জিসিএফ থেকে চরম বিপদাপন্ন স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অভিযোজনে অধিকতর গুরুত্বারোপ করতে হবে। এছাড়া এসব দেশে জ্বালানি খাতে ন্যায্য রূপান্তরে অর্থায়ন করতে হবে। ৯. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাধ্যতামূলক বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’ ঘোষণা করে স্বাধীন ও সম্মানজনক অভিবাসনের অধিকার দিতে হবে। ১০. ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ মিথেন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কৃষিখাতকে এ লক্ষ্যমাত্রার বাইরে রাখতে হবে। এবং ১১. শিল্প, পরিষেবা ও বাণিজ্যসহ সকল খাতে সবুজ রূপান্তরের জন্য স্পষ্ট ও বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।