জাতীয় ডেস্ক:
কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সংযোগ হওয়ার বিষয়টি গৌরবের বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে রেল সংযোগ একটি নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এশিয়ান বৃহৎ এবং ঝিনুক আদলে তৈরি আইকনিক রেল স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার এখন থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) ১১টা ৩৫ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ১২ টা ১৫ মিনিটে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী সুধী সমাবেশ পৌঁছার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া শেষে শিশুদের সঙ্গে ছবি তোলেন। এরপরই মঞ্চে বসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন রেলমন্ত্রী ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুজন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘রেলকে আগামী ৩ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের করতে কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিশ্বের নানা দেশে যুদ্ধের কারণে কিছু জিনিসের মূল্য বেড়েছে। তাই প্রতিটি মানুষকে খালি জায়গায় খাদ্য উৎপাদন করতে অনুরোধ করছি।’
বিএনপি ও জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘চোখ থাকতে অন্ধরা উন্নয়ন দেখে না। তাদের প্রতি পরামর্শ ১০ টাকায় ঢাকায় চক্ষু চিকিৎসাসেবা নিন। যারা আগুন সন্ত্রাস করে। আগুন দিয়ে বাস পুড়িয়ে দেয়া, মানুষ হত্যা করে তাদের চোখ না, মনও অন্ধ। তারা ধ্বংস করে, সৃষ্টি করে না। এদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটাকে (রেললাইন) নিজের সম্পদ মনে করে ব্যবহার করতে হবে। এটা পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সকলের। চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত রেল সংযোগ হবে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে দেশবাসী ব্যবহারে যত্নবান হবেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। এটার সঙ্গে থাকতে হবে সকলকে।’
রেল লাইনের কাজের সঙ্গে জড়িতদের ধন্যবাদ জানন তিনি। এরপর দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একে একে রেল বন্ধ করে দেয়া হলো। বলা হলো রেল লাভজনক না। এই রেল সাধারণ মানুষের চলাচলের। পণ্য পরিবহনের। এটা নিয়ে লাভ-ক্ষতির চিন্তা করা যায় না। এবার সরকার গঠনের পর রেল আলাদা মন্ত্রণালয় করে সেতু মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করা হলো। আলাদা বরাদ্দ করা হলো। ১৫ বছরে ৮৭৩ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণ, রেল বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রেলে কক্সবাজার আসা যাবে। এটা স্বপ্ন। কিন্তু এটা বাস্তবে রূপ নিল। ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেল আসছে। পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার আসার উদ্যোগ নেয়া হবে। উত্তর অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হবে এই লাইন।’
সরকার প্রধান কক্সবাজারের পর্যটনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেয়া এবং রেলে ওয়াইফাই ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এক/ দুজন বাইর থেকে এসে আমাদের পরামর্শ দেবে, খবরদারি করবে তা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর পরই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে গেছে। অথচ এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ৩ বছর ৭ মাস পরই ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিল। জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ানো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বল্প উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু ১৫ আগস্টের পর বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতায় এসে কলঙ্কিত ইতিহাস রচিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের দেশে এসে সম্মানিত করা, মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে মুছে দেয়ার চেষ্টা চলেছে একে একে। সেই বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে আমার দেশে ফেরা। আমি এদেশের মানুষের জন্য সব কিছু করতে চাই। ক্ষমতার লোভে দেশের সম্পদ বিক্রি করতে রাজী না। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা।’
দুপুর ১ টা ২৩ মিনিটে রেল কাউন্টারে গিয়ে প্রথম টিকেট কাটেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর হেঁটে যান রেলের দিকে। রেলের পাশে দাঁড়ানো প্রধানমন্ত্রীর হাতে সবুজ পতাকা দেয়া হয়। আর সেই পতাকা নেড়ে বাঁশি বাজিয়ে প্রধানমন্ত্রী রেলে ওঠেন। ১ টা ২৯ মিনিটে রেলটি রামু স্টেশনের দিকে যাত্রা শুরু করে। ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে প্রধানমন্ত্রী রামু স্টেশনে ১ টা ৫৫ মিনিটে পৌঁছেছে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সুধী মহল, শিশুসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে।
রামু পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রী দুপুরের খাবার ও নামাজের বিরতি নেন। এরপর বিমান বন্দর হয়ে হেলিকপ্টারে যাত্রা করেন মাতারবাড়ি।