জাতীয় ডেস্ক :
হজ ও ওমরাহ করতে যাওয়া বাংলাদেশিদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে সহযোগিতা চেয়েছেন সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম। এক্ষেত্রে তিনি কিছু সুপারিশও তুলে ধরেন।
গত বছর ওমরাহ পালন করতে গিয়ে ১২৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এছাড়া অসংখ্য ওমরাহযাত্রী সৌদি আরবে হারিয়েও গেছেন। এসব বিষয়ে কাজ করার জন্য সক্ষমতা বাড়াতেও সহযোগিতা চান তিনি।
গত ২৩ জানুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে বলা হয়, ‘১৪৪৩ (২০২২ সাল) হিজরি সনের হজ পরবর্তী সময়ে পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য বাংলাদেশ থেকে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যক মুসলিম সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগ পান। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকেও ব্যাপকহারে ওমরাহযাত্রী সৌদিতে যান। ফলে হারাম শরীফ এলাকা এবং হারাম শরীফ সংলগ্ন এলাকাগুলো সম্প্রতি অত্যন্ত জনাকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, বিপুল সংখ্যক ওমরাহ যাত্রী এবং তাদের পরিবহনকারী যানবাহনের সমাগমে হারাম শরীফ এলাকায় চলাচল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রথমবার সৌদি আরবে যাওয়া ওমরাহযাত্রীরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এতে বলা হয়, ১৪৪৩ হজ পরবর্তী কয়েক মাসে ১২৩ জন বাংলাদেশি ওমরাহযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং অসংখ্য ওমরাহযাত্রী হারিয়ে যাওয়া বা নিখোঁজ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
‘হারিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ওমরাহযাত্রীরা গাইডের নিয়ন্ত্রণে গ্রুপে চলাচল না করে একাই চলাচলের চেষ্টা করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ওমরাহযাত্রীরা হোটেল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রেই নিজস্ব পাসপোর্ট সাথে রাখছেন না। তাছাড়া আবাসিক হোটেলের বা ওমরাহ কোম্পানির কোনো তথ্য সাথে না নিয়েই অনেক সময় হোটেল থেকে একাকী বেরিয়ে পড়ছেন এবং হোটেলে ফেরত না যেতে পেরে হারিয়ে যাচ্ছেন।’
হজ কাউন্সিলর আরও জানান, হারিয়ে যাওয়া ওমরাহযাত্রীদের খুঁজে পাওয়া যেমন দুরূহ, তেমনি হারানো ব্যক্তির কেউ সাক্ষাৎ পেলেও তাকে তার হোটেলে পৌঁছে দেয়াও কঠিন। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অনুসন্ধানের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় থানায়, হাসপাতালে এবং অন্যান্য সম্ভাব্য স্থানে ভ্রমণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে।
জেদ্দা থেকে মক্কা ও মদিনায় গমন করে স্বল্পসংখ্যক জনবল এবং সীমিত জ্বালানি দিয়ে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করা দূরুহ হয়ে পড়ছে।
জহিরুল ইসলাম বলেন, হারিয়ে যাওয়া ওমরাহযাত্রীদের অভিভাবক, কাছের আত্মীয় ও পরিচিতজন এ কার্যালয়কে (হজ অফিস) হারানো ব্যক্তির অনুসন্ধানের জন্য নানারূপে চাপ সৃষ্টি করছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুঁজে না পাওয়ার কারণে এ অফিসকে দায়ী করছেন।
উল্লেখ্য যে, বছরব্যাপী এ ধরণের কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অনুবাদক এবং পর্যাপ্ত জ্বালানি বরাদ্দ নেই।
ওমরাহযাত্রী হারিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে হারানো ওমরাহযাত্রীর বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় জনবল এবং জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে চিঠিতে জানানো হয়।
ওমরাযাত্রীদের হারিয়ে যাওয়ার সংখ্যা কমাতে সুপারিশ তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, ওমরাহযাত্রীদের গ্রুপভিত্তিক সৌদি আরবে পাঠানো যেতে পারে। মক্কা, মদিনার রাস্তাঘাট চিনেন এবং আরবি ভাষা বুঝেন এমন গাইড সঙ্গে থাকতে হবে।
সৌদি আরবে যাওয়ার পর ওমরাহযাত্রীদের স্থায়ী ঠিকানা, জরুরি যোগাযোগের মোবাইল নম্বর, মক্কা, মদিনায় আবাসিক হোটেলের ঠিকানা, ফোন/মোবাইল নম্বর, মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ এজেন্সির প্রতিনিধির নাম ও মোবাইল নম্বর ইত্যাদি উল্লেখিত ছবিসহ আইডি কার্ড আবশ্যিকভাবে সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখতে হবে।
পাসপোর্ট সাবধানতার সাথে সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো কারণে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ হজ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল থেকে ট্রাভেল পারমিট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ১০৫ সৌদি রিয়াল ফি দিতে হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।
একইসঙ্গে ওমরাহযাত্রী মৃত্যুবরণ করলে মরদেহ সৌদি আরবে দাফন কিংবা দেশে ফিরিয়ে নেয়ার উপায়ও চিঠিতে জানিয়েছেন হজ কাউন্সিলর।
বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং ওমরাহযাত্রীদের সার্বিক সেবা নিশ্চিতে জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ অফিসের জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।