হোম ফিচার ওবায়দুল কাদের সঠিক নাকি আমু সাহেব, প্রশ্ন খন্দকার মোশাররফের

রাজনীতি ডেস্ক:

‘গতকাল আমির হোসেন আমু বলছেন জাতিসংঘের সমঝোতার মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করতে তারা প্রস্তুত। আজ আবার ওবায়দুল কাদের বলছেন এটা নাকি সঠিক না। তাহলে আসলে কারটা সঠিক? ওবায়দুল কাদের নাকি আমির হোসেন আমু? এটা আমরা প্রশ্ন করতে চাই না। তারা আসলে এখন এলোমেলো লীগ হয়ে গিয়েছে, আওয়ামী লীগ না।’ এই মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বুধবার (৭ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘রাষ্ট্রনায়ক জিয়া ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৬ জুন) আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই। প্রয়োজনে অতীতের মতো জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের মধ্যস্থতায়ও সেই আলোচনা হতে পারে।’ যদিও পরদিন আজ বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের দেশে এমন কোনও রাজনৈতিক সংকট হয়নি যে জাতিসংঘের এখানে ইন্টারফেয়ার করতে হবে। জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে এই রকম কোনও সংকট স্বাধীন বাংলাদেশে হয়নি।’

আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সেদিন মন্তব্য করেছেন আটলান্টিক পার হয়ে ২০ ঘণ্টা জার্নি করে নাকি আমেরিকা যাওয়ার প্রয়োজন নাই। কিন্তু কয়েকদিন আগেই তিনি সেখানে গিয়ে থেকে এসেছেন। আর এখন বলছেন তিনি আর যাবেন না। অর্থাৎ ওই যে ভিসার স্যাংশন হয়েছে, সেটা প্রথম উনার ওপরে, তারপর উনার সিন্ডিকেট আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হয়েছে বা হবে। এটা উনি পরিষ্কারভাবে জেনেই বলেছেন যে উনি আর আমেরিকা যাবেন না। এতদিন প্রধানমন্ত্রী বললেন এটা বিএনপির বিরুদ্ধে হয়েছে। এখন তো উনিই স্বীকার করলেন যে এটা উনার বিরুদ্ধে এবং উনার লোকজনের বিরুদ্ধে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বিদেশিদের বলেছেন আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন নাকি গণতন্ত্রের সুবাতাস বইতে থাকে। আর আওয়ামী লীগের আমলে নাকি সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। আবার বলছে আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তার মানে আগেরটা ঠিক নাই। কিছুদিন আগে আবার বলেছিল বিএনপি নাকি সন্ত্রাস। এদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনায় বসার কোনও প্রশ্নই উঠে না।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বললেন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। তারপর এটা দুই ঘণ্টা টেলিভিশনে, ইউটিউবে চললো। তারপর এটা মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাহার করল। বললেন মন্ত্রী, আর প্রত্যাহার করলেন মন্ত্রণালয়। তাহলে কে বেশি ক্ষমতাবান? মন্ত্রী নাকি এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি? প্রটোকলে কী আছে? অতএব এলোমেলো যে হচ্ছে সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। শিগগিরই আরও এলোমেলো হবে সেটা আপনারা দেখতে পারবেন।’

আওয়ামী লীগের সময় শেষ উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখন এই শেষটা কীভাবে হবে? আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন এর সমাধান হবে রাজপথে। কিন্তু যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি, আমাদের মন্ত্রীদের কূটনৈতিক পাড়ায় দৌড়াদৌড়ি, আমাদের সেনাবাহিনীর প্রধানের কূটনৈতিক পাড়ায় দৌড়াদৌড়ি, কূটনীতিকদের দৌড়াদৌড়ি, তাই আমরা ভাবছি যে দেশের অবস্থা ভালো নেই, সরকারের অবস্থা ভালো নেই। তাই তারা যে এলোমেলো করবে এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, ‘তাই এই সংকট থেকে যদি বের হতে হয় তাহলে কোনও রকম বক্তব্য ছাড়া সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এখানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করে নির্বাচন দেবে, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে, যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবে। তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। তবেই এই সংকটের সমাধান হবে।’

এসময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড্যাব ও চেয়ারপারসন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ড্যাব মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন