জাতীয় ডেস্ক :
করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে চলতি বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) বিকেলে এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দিন দিন করোনা সংক্রমণের হার কমছে। কিছুদিন আগেও এই সংক্রমণের হার ছিল ৩০-৩২ শতাংশ। এখন সেটা কমে ২২-২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই হার কমছে। আমরা আশা করছি, পরিস্থিতি অনুকূলে থকালে নভেম্বরের মাঝামাঝি এইচএসসি এবং ডিসেম্বরের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারব। আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ফরম পূরণও শুরু হয়েছে। এসএসসির ফরম পূরণ আগেই শুরু হয়েছে। আজ থেকে এইচএসসিও ফরম পূরণ শুরু হলো। এই ফরম পূরণের জন্য তাদের কোথাও যেতে হবে না; কলেজ থেকেই করে দেওয়া হবে। তাদের সিলেবাসও অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের যে অ্যাসাইমেন্ট দেওয়া হয়েছে; সেগুলো যদি তারা করে এবং বইটা পড়ে তাহলে তাদের প্রস্তুতিটা হয়ে যাবে, তারা পরীক্ষা দিতে পারবে।
ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। টিকা কর্যক্রমও চলছে। আশা করা যাচ্ছে, ওই সময়ে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে। আমরা পরীক্ষা নিতে পারব ইনশাল্লাহ। আর কোনো কারণে যদি পরিস্থিতি অনুকূলে না আসে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত ২৬ জুলাই ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এস এম আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া ও ফলাফল প্রকাশের নিয়মের কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা শুধু গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে সময় ও নম্বর কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া হবে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ জনিত অতিমারির কারণে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আবশ্যিক বিষয় ও চতুর্থ বিষয়ে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জেএসসি বা সমমান ও এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে আবশ্যিক বিষয় ও চতুর্থ বিষয়ের নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে যোগ করে এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা-২০২১ এর ফলাফল দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে কোনো রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
এ ছাড়া এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ডে চতুর্থ বিষয় পরিবর্তন বা সংশোধনের সুযোগ নেই বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত ১৫ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রুপভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ওপর শুধু নৈর্বাচনিক পরীক্ষার মাধ্যমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। পূর্ববর্তী ক্লাসে আবশ্যিক যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর পরীক্ষা না নিয়ে আগের পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।
তবে পরীক্ষার প্রশ্ন, নম্বর ও সময় কেমন হবে? এ প্রশ্নেরও উত্তর দেন শিক্ষামন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টায়। আর প্রশ্নপত্র এখন যেভাবে বহুনির্বাচনী ও রচনামূলক হয়, সেভাবেই হবে। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ পাবে। যেমন আগে যেখানে ১০টি প্রশ্নের মধ্যে থেকে ৮টির উত্তর দিতে হতো, সেখানে এখন হয়তো সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে। তবে তার মধ্যে তিনটি বা চারটির উত্তর দিতে বলা হতে পারে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে।
ডা. দীপু মনি জানান, প্রতি বিষয়ে মোট নম্বর ১০০–এর বদলে ৫০ নম্বর করা হবে। পরে এই ৫০ নম্বরকে ১০০–তে রূপান্তর করে পরীক্ষার ফল দেওয়া হবে।
এ সময় তিনি আরও জানান, এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার্থীদের আগামী রোববার (১৮ জুলাই) থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। ১২ সপ্তাহে মোট ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর প্রতি সপ্তাহে ২টি করে মোট ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার্থীদের আগামী ২৬ জুলাই থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। ১৫ সপ্তাহে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে (৬টি পত্রে) প্রতিটি পত্রে ৫টি করে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে।
ডা. দীপু মনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সার্বিক বিবেচনায় পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর পূর্ববর্তী জেএসসি বা জেডিসি বা এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এবং অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে অথবা শুধু সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এসএসসি বা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরীক্ষা আয়োজন করা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এ অবস্থায় এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিকল্প মূল্যায়নের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।