অনলাইন ডেস্ক :
করোনা সংকটে খাদ্যের দাবিতে জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রংপুরের বাড়ি ‘পল্লী নিবাস’ ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এই ঘটনায় জাতীয় পার্টির মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, স্থানীয় জাপা নেতাদের একটি অংশ এলাকাবাসীকে উসকে দিয়ে সাদ এরশাদের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ করিয়েছে। পার্টির তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত রংপুরে এমন ঘটনায় দলের শীর্ষ নেতারা অস্বস্তিতে আছেন। তবে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
জাপার নেতারা বলছেন, এরশাদের মৃত্যুর পর তার নির্বাচনি আসন রংপুর-৩ এর উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন স্থানীয় কয়েকজন নেতা। কিন্তু সেখানে নির্বাচন করেন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ। এরপর থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ তাকে এমপি হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। এরা নির্বাচনে সরাসরি সাদের বিরোধিতা করেছিলেন। এ কারণে তারাই এলাকাবাসীকে দিয়ে এরশাদের বাড়ি ঘেরাও ও ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ করিয়েছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের দুর্যোগের মধ্যে অসহায় ও গরিব মানুষদের ত্রাণ না দেওয়া, ভোটের পর এলাকাবাসীর খোঁজ না নেওয়ার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সাদ এরশাদের পৈতৃক বাড়ি ঘেরাও ও বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ।
খাদ্যের দাবিতে এরশাদের ‘পল্লী নিবাস’ ঘেরাও করে বিক্ষোভ
এরশাদের স্ত্রী ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভালো কাজের তো মূল্যায়ন হয় না। আসলে মানুষ ভালো সহ্য করতে পারে না। রংপুরের মানুষ এরশাদের বাড়ি ঘেরাও করতে পারে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। শুধু এইটুকুই বলবো। আমি আর কিছু বলতে চাই না। কারা এটা করেছে খুজেঁ বের করেন আপনারা। তাহলে সব বুঝতে পারবেন।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘এটা আমরা সমাধান করেছি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে যারা ত্রাণ পায়নি, তাদের তালিকা তৈরি করতে বলেছি। তারপর আমরা ত্রাণ দেবো। মানুষ ত্রাণ না পেলে জনপ্রতিধির বাড়িতে আসবে এটা স্বাভাবিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের দলের কোনও তহবিল নেই। তহবিল গঠন করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। আসলে বর্তমান অবস্থায় সবাই একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তাই যাদের অর্থ আছে তারাও সেভাবে খরচ করছে না। তবে দলের প্রত্যেক এমপি ও নেতাকর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’
বিক্ষোভের সময় রংপুরে ছিলেন বলে উল্লেখ করে জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আসলে এ ঘটনা দলের জন্য অস্বস্তিকর তো বটেই। আমার নিজের জন্য আরও বেশি অস্বস্তিকর। কারণ, আমি নিজেই তখন রংপুরে ছিলাম।’
রাঙ্গা বলেন, ‘এলাকার কিছু লোক যারা এখনও ত্রাণ পায়নি, তারা মনে করেছে যে, এমপিরা ত্রাণ দেয়। তাই তারা বাড়ি ঘেরাও করেছে। তবে এরা সরাসরি জাতীয় পার্টি করে না। এদেরকে কেউ ২০-৫০ হাজার টাকা দিয়ে নিয়ে এসে এটা করিয়েছে। মনে হয় আমাদের দলের কিছু লোক এর সঙ্গে জড়িত আছে। কেউ কেউ একটু পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। বিক্ষোভকারীদের বড় একটা অংশ ছিল, যারা সাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। যদিও এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।’
খাদ্যের দাবিতে এরশাদের ‘পল্লী নিবাস’ ঘেরাও করে বিক্ষোভ
বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দলের কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে জাপার মহাসচিব বলেন, ‘তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে, কারা এটি করিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে বিষয়টি বের করার চেষ্টা করছে। তারপর ব্যবস্থা নেবো।’
সংসদ সদস্য সাদ এরশাদ বলেন, ‘অভিযোগ করা হচ্ছে আমি নাকি রংপুরে যাই না। আমি তো রংপুরেই ছিলাম। এটা আসলে ষড়যন্ত্র। ৯ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আমি রংপুরেই ছিলাম। কতজন এমপি এ রকম থাকে আমি জানি না। এর আগেও রংপুরে আমি ১৭ দিন ছিলাম। আমি নিজের তহবিল খরচ করে ত্রাণও দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এটা জানি যে, কারও যখন ক্ষোভ থাকে, সেটা প্রকাশ করার একটাই জায়গা আছে। সেটা হলো রংপুরের পল্লী নিবাস। রংপুরের মানুষ সব সময় এরশাদ ও তার পরিবারের কাছে এসেছে। এজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই যে, তারা আমার পাশে আছে। আসলে মেয়র ও রংপুরের ডিসির মাধ্যমে ঠিকভাবে ত্রাণ যায়নি। এজন্য তারা আমার কাছে এসেছে। মেয়র ও ডিসি ছাড়া এমপিরাও কেউ ত্রাণ পাচ্ছে না। আমি যতটুকু করেছি,সেটা নিজের তহবিল থেকেই করছি। দলের কোনও তহবিল নেই।’