জাতীয় ডেস্ক:
ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজার ও নিউমার্কেটের সংযোগ স্থাপনকারী কুমার নদীর বেইলি সেতু এখন স্বস্তির ট্রানজিট। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য হিসেবে এ কে আজাদ নির্বাচিত হওয়ার পর শহরকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত করার শুভ সূচনা হিসেবে এটাকে দেখছেন সাধারণ মানুষ।
লোহার ব্রিজ নামে পরিচিত এই বেইলি সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কুমার নদী পারাপার হয়। শহরের বাইরে থেকে আসা হাজারো মানুষ শহরের প্রবেশ মুখে নেমে শরীয়তুল্লাহ বাজার হয়ে হেঁটে নিউ মার্কেট, চকবাজার, থানার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন এই সেতু দিয়ে।
শুধুমাত্র হেঁটে চলার জন্য নির্মিত সেতুটি গত সাড়ে তিন বছর ধরে অবৈধ ফুটপাত দখলদারদের কাছে জিম্মি হয়ে ছিল। টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র হাঁটার এই সরু সেতুটিকে হকারদের কাছে ভাড়া দিয়ে আসছিল। ফলে প্রতিনিয়তই নাজেহাল হতে হতো সাধারণ পথচারীদের। ছিনতাই, পকেটমারসহ ছোটখাটো অঘটন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। বিশেষ করে নারীদের জন্য এই বেইলি ব্রিজ ছিল খুবই অনিরাপদ। ভিড়ের সুযোগে যৌন হয়রানির ঘটনা ছিল নিত্যদিনের।
গত তিনদিন ধরে জনগুরুত্বপূর্ণ এই বেইলি সেতুটি সম্পূর্ণমুক্ত করে দিয়েছে প্রশাসন। ফলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দে নদীর এপার ওপার যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে।
সেতু পারাপারে সময় শনিবার দুপুরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এমন পরিবেশটি চেয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। এমন পরিবেশ যেন এখন থেকে বজায় থাকে সে প্রত্যাশা তাদের।
ব্রিজ পার হওয়া কয়েকজন নারী অকপটেই জানালেন তাদের আগের হয়রানির কথা। বেইলি সেতুটি জনগণের চলাচলের জন্য ফাঁকা করে দেয়ায় নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে আজাদ ও ফরিদপুরের প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জানান তারা।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে এ কে আজাদ প্রতিনিয়তই ফরিদপুর শহরকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত করার অঙ্গীকার করে এসেছেন। এমপি হবার পরপরই ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন পদক্ষেপ আশাবাদী করে তুলেছে সাধারণ মানুষকে।
ফরিদপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ‘আমরা এই দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখে অত্যন্ত আনন্দিত। নতুন নেতৃত্ব এভাবেই আমাদের শহরকে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে একটি বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন, এটাই নাগরিকদের প্রত্যাশা।’
হাজী শরিয়তুল্লাহ বাজারের ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বেইলি ব্রিজের ওপর অবৈধভাবে বিক্রি করা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজানোর কারণে মূল বাজারে লোকজনের আগমন ঘটতো কম। আমরা সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে, দোকান ভাড়া করে কর্মচারী রেখে ব্যবসা করি, অথচ একশ্রেণির অসাধু লোক ওই ব্রিজের ওপর হকার বসিয়ে চাঁদাবাজি করত। এটি বন্ধ হয়েছে, আজ তিনদিন আমরা স্বস্তিতে আছি, বাজারেও বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যা।’
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমি নিজে ফোর্স নিয়ে বেইলি ব্রিজকে দখলমুক্ত করেছি। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি এখন থেকে দখলমুক্ত থাকবে। পাশাপাশি ফরিদপুর শহরের যেসব স্থানে অবৈধভাবে ফুটপাত দখলের কারণে জনগণের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে সেসব স্থান থেকে অভিযোগ পেলে ফরিদপুর কোতোয়ালি পুলিশ, ট্রাফিক বিভাগ ও ডিবি পুলিশ সমন্বিতভাবে পুলিশ সুপারের নির্দেশে জনগণের স্বাভাবিক ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা হবে।’
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, ‘আমার নির্বাচনী ওয়াদা ছিল শহরকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস মুক্ত করার। এটা তার প্রথম পদক্ষেপ। ইতিপূর্বে ওই ফুটপাত থেকে অসাধু ব্যক্তিরা নিয়মিত চাঁদা তুলতো। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাস দেখতে চাই না।’