নিউজ ডেস্ক:
‘ছোট-খাটো বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করার’ আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকালে সাভারের আশুলিয়ায় শ্রীপুর এলাকায় বিএনপির এক প্রতিবাদ সমাবেশে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তিনি এই আহ্বান জানান। ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ‘নারকীয় জুলাই আশুলিয়া থানা সংলগ্ন লাশ পোড়ানো স্থানে’ ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান-২০২৪: নারকীয় আশুলিয়া স্মরণে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
গত বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পূর্বক্ষণে ৫ আগস্ট আশুলিয়া পুলিশের গুলিতে নিহতদের লাশ ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। দিনটিতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনার স্মরণে বিএনপি এই জনসভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে অনেক রকম কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক বাদানুবাদ হচ্ছে, হবেই… গণতন্ত্রে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কোনও কিছু করবেন না যাতে আবার গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের সেটাই আহ্বান থাকবে। আমাদের আহ্বান থাকবে, ছোটখাট বিষয়গুলো নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না যে অবস্থায় আবার সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোনও সুযোগ পায় দেশে ফিরে আসার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করবো সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে, আসুন আমরা অতি দ্রুত আমাদের সমস্যাগুলো আছে সেগুলোকে মিটিয়ে ফেলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাই। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করি।’
‘জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে আজকে এই মহিলা (শহীদ পরিবারের এক সদস্য) যে অভিযোগ করেছেন, সে অভিযোগ আমাদেরকে শুনতে হতো না। আমি আজকে যারা আয়োজন করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই জন্যে… একটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম একটি আয়োজন করেছেন এবং এতে করে জাতির বিবেক জেগে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করি, আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আজকে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা অবশ্যই গণতন্ত্রে ফিরে যেতে সক্ষম হব এবং আজকে যারা বিচার পাচ্ছেন না তাদের বিচার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো, তাদের জীবনের ব্যবস্থা করতে আমরা সক্ষম হবো।’
‘আমি হতবাক হয়ে গেছি, এই দৃশ্য দেখা যায় না’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আজকে হতবাক হয়ে গেছি, এই দৃশ্য দেখা যায় না। আমরা কোন দেশে আছি… দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হিটলার গ্যাস চেম্বারে দিয়ে মানুষকে হত্যা করেছিল… আজকে দেখলাম আমাদের দেশে হাসিনা ছাত্রদেরকে পুঁড়িয়ে মেরেছে।’
‘এখানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্বজনদের বক্তব্যের পরে বক্তব্য রাখার খুব একটা মানসিক অবস্থা থাকে না, আজকে সেটা নেই। আমি নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা করে যে, আমরা কেমন একটা জাতি যে জাতি আমরা আমাদের ছেলেদেরকে পুড়িয়ে মারি। কেমন একটা জাতি যে, আমাদের রাষ্ট্রের যারা কর্মচারী-কর্মকর্তা তারা সন্তানদেরকে হত্যা এবং পরে পুড়িয়ে হত্যা করে। এখানে একজন মা বক্তব্য রাখছিলেন যে, তার ছেলে বেঁচে ছিল সেই অবস্থায় তাদেরকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার একজনের অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখানে একজন বললেন, তার খোঁজ কেউ নিচ্ছে না। আমি ঢাকার ডিসিকে এখান থেকে বসেই ফোন করেছিলাম, সরকার কমিট করেছিলেন যে যারা আহত এবং শহীদ বিশেষ করে যারা শহীদ হয়েছে তাদের পরিবারগুলোকে ১০ লাখ টাকা করে তারা প্রাথমিকভাবে অনুদান দেবেন আর যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা সমস্ত ব্যয়ভার বহন করবে। আমি মাত্র দুই জনকে এখানে পেয়েছি, যারা সেই টাকাটা পেয়েছেন বন্ড হিসেবে। বাকিদের আমি জানি না। একটা ছোট বাচ্চা ছেলে আট বছর বয়স। তার মাথার খুলিটা উড়ে গিয়েছিল। সেটাকে আর্টিফিশিয়াল প্লাস্টিক দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছিল।’
‘হাসিনা ভারত থেকে উস্কানি দিচ্ছে’
মির্জা ফখরুল ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘এখনও তীব্র স্বরে হাসিনার বিচার চাই… গোটা জাতি হাসিনার বিচার চায়। আপনারা জানেন, হাসিনা পালিয়ে গেছে ভারতে… ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন যে, সে সেখান থেকে কথা বলে বাংলাদেশের নৈরাজ্য সৃষ্টি করবার জন্য। বিভিন্ন রকম প্রভোকেশন করে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে এবং চেষ্টা করেও গোপালগঞ্জ ইতিমধ্যে তারা সেই অবস্থা তৈরি করেছে।’
‘এনজিওবাদ দেশ চালাচ্ছে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি বলব একটি কথা, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু এনজিওবাদ আজকে দেশ চালাচ্ছে। এখান থেকে কীভাবে মুক্তি নেবেন সেই পথ নির্দেশনা দেবেন আমাদের নেতা এটাই প্রত্যাশা করি।’
‘হাসিনার বিচার হতেই হবে’
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘যেভাবে এই আশুলিয়াতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ফ্যাসিস্টরা, তাদের প্রধান শেখ হাসিনার বিচার এদেশের মাটিতে হতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তথা জিয়া পরিবার সবসময়ে দেশের দুর্দিনে দেশের মানুষের পাশে ছিল, তারেক রহমান আমাদের নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নেবেন। তিনি সবসময় জনগণের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।’
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন।
শহীদ পরিবারের মধ্যে বাবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আখতার, আরাফাত মুন্সির বাবা স্বপন মুন্সি, বায়েজিদ মুস্তাফিজের স্ত্রী রিনা আখতার, শ্রাবন গাজীর বাবা আবদুল মান্নান গাজী, মামুন খন্দকার বিপ্লবের স্ত্রী খন্দকার সাথী, সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, আরাফুর রহমান রাসেলের ভাই সায়েদুর রহমান বাবু, জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে পঙ্গু শান্ত তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরতে গিয়ে পুরো সমাবেশস্থলকে আবেগময় করে তোলেন।