১০ এপ্রিল ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনস ইনস্টিটিউট ফর হেলথ তাদের জরিপ ও মূল্যায়নের পর এ আশাবাদের কথা জানিয়েছে। পুরো মে মাস পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন চালু রাখার ওপর ভিত্তি করে এ আশাবাদী অনুমান করা হয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কোনো কোনো রাজ্যে স্কুলসহ ব্যবসা-বাণিজ্য এর আগেই খুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কঠোরভাবে পালন না করা হলে পরিস্থিতি আবার নাজুক হবে, এতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনস ইনস্টিটিউট ফর হেলথ বলেছে, চলমান সতর্কাবস্থা মে মাস পর্যন্ত অব্যাহত রাখলেই আমেরিকায় মোট মৃত্যুর পরিমাণ ৬১ হাজার ৫৫০ জনের বেশি দাঁড়াবে।
নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডি পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জানিয়েছেন, ৩০০ জনকে দিয়ে টেস্ট শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দিনে অন্তত দুই হাজার জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে চায় কোলাহলের নগরী নিউইয়র্ক। এখনো মনে করা হচ্ছে মে মাসের শেষ পর্যন্ত সবকিছু বন্ধই থাকবে। ১০ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কম। রাজ্যে ৭৭৭ জন। হাসপাতালেও কম লোকজন ভর্তি হচ্ছে।
গভর্নর বলেছেন, ‘আমরা হয়তো নাজুক পরিস্থিতির চূড়া থেকে সমান্তরালের দিকে যেতে পারছি এখন। হাসপাতালে যারা ভর্তি, তাদের মধ্য থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে। এ পর্যন্ত আমরা যা করেছি, যে সতর্কতা অবলম্বন করেছি, তার কারণেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া এ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।’
তিনটি বিষয়ে প্রতিদিন নজর রাখা হচ্ছে বলে গভর্নর জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তির নতুন সংখ্যা, হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তির সংখ্যা এবং টেস্ট করার পর ভাইরাসে আক্রান্তের হার।
নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ১০ এপ্রিল জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেই হার্ট আইল্যান্ডে গণ কবর দেওয়া হবে না। এ প্রাদুর্ভাবে মারা যাওয়াদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পরিবার, স্বজন, বন্ধু—যে কারও জন্য অপেক্ষা করা হবে প্রয়োজনে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও বেশি। মেয়র বলেছেন, এখনো আমাদের অনেকটাই দুর্গম পথ অতিক্রম করতে হবে। এপ্রিলের মধ্যে অবস্থার নাটকীয় কোনো উন্নতি হওয়ার আশা করছেন না মেয়র ব্লাজিও।
বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের নানা দেশ থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে। বাংলাদেশ থেকেও একাধিক ফ্লাইটে মার্কিন নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশের বেশ কিছু নাগরিক পর্যটন ভিসা, ব্যবসা বা শিক্ষার্থী ভিসায় আসা লোকজনও যুক্তরাষ্ট্রে আটকা পড়েছেন।
আইনজীবী ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেছেন, ‘নিউইয়র্কসহ আশপাশের শতাধিক বাংলাদেশি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ। নগদ অর্থ যা এনেছিলেন, তাও ফুরিয়ে গেছে। করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ঢাকায় ফিরতে পারছেন না।’
এদিকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদের দাফন ১০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় সম্পন্ন হয়েছে। তার মরদেহে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডস্থ ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল কবর স্থানে দাফন করা হয়। সেখানেই তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জ্যাকসন হাইটসের মোহাম্মদী সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম কাজী কায়্যুম। ব্রংসের ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনকেও কমিউনিটি হারিয়েছে ৯ এপ্রিল রাতে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বাংলাদেশির মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গেছে। অন্তত চার শতাধিক স্বদেশি আক্রান্ত রয়েছেন।
টানা লকডাউনের কারণে মানুষের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়ে গেছে। ঘরের বাজার শেষ হয়ে গেছে অনেকেরই। নাগরিক সহযোগিতার অর্থ এখনো কারও হাতে এসে পৌঁছায়নি।
যাঁদের ট্যাক্স রিটার্ন করতে হয়নি, তাঁদের তথ্য অনলাইনে আপডেট দেওয়ার জন্য আইআরএস সুবিধা উন্মুক্ত করেছে। যাঁরা ২০১৮ সালে বা ২০১৯ সালে কোনো আয় করেননি বা করযোগ্য আয়ের চেয়ে যাঁদের বার্ষিক আয় কম ছিল, তাঁরা ওয়েবসাইটে গিয়ে নন–ফাইলিং নাগরিক হিসেবে তথ্য দিতে পারবেন। ফেডারেল নাগরিক সহযোগিতার অর্থ পাওয়ার জন্য এ তথ্য প্রদান জরুরি বলে নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।