হোম আন্তর্জাতিক এক বছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কত

আন্তর্জাতিক :
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হলো। গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক পিপল’স রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপল’স রিপাবলিককে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি এবং সেই সঙ্গে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

দুদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে রুশ সেনাবাহিনীর রাজধানী কিয়েভ অভিমুখে অভিযান এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সংঘাত।

এক বছর পরও পুরোদমে চলছে এই সংঘাত। এখন পর্যন্ত থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধে শুরু থেকেই ইউক্রেনকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহসহ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। অন্যদিকে কারো সহযোগিতা ছাড়াই একাই অভিযান অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া।

গত এক বছরের লড়াইয়ে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি একটা দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী। এরই মধ্যে দখল করা এসব এলাকা নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করেছে মস্কো। ইউক্রেন হারানো এলাকাগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

যুদ্ধ মানেই প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি। ইউক্রেন সংঘাতেও তার ব্যতিক্রম নয়। উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ। সংখ্যাই সেসব ক্ষয়ক্ষতির সাক্ষ্য দিচ্ছে।

উভয় পক্ষের হতাহতের সংখ্যা 

যুদ্ধের এক বছরে দুই দেশেরই বেশ কিছু অর্জন রয়েছে। ইউক্রেন যেমন পশ্চিমাদের বিশেষ সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছে, তেমনি মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে রাশিয়ার। তবে যুদ্ধে উভয় দেশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কম নয়। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের তথ্য-উপাত্তের মধ্যে অনেক ঘাটতি রয়েছে।

পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক তথ্যমতে, সংঘাতে গত এক বছরে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩ লাখ সেনা হতাহত হয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ার প্রায় ২ লাখ সেনা হতাহত হয়েছে। ইউক্রেনের সরকারি হিসাবমতে, সংঘাতে নিহত রুশ সেনাসংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার। তবে রাশিয়া বলছে, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত তাদের ৫ হাজার ৯৩৭ জন সেনা নিহত হয়েছে।

ইউক্রেনীয় সেনাদের হতাহতের সংখ্যা কিছুটা কম। তবে সেটা ১ লাখের বেশি ছাড়া কম হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। হতাহতের এই তথ্য অতিরঞ্জনও হতে পারে। ইউক্রেন সরকারের হিসাবে, যুদ্ধের শুরু থেকে ১৩ হাজার সেনা নিহত হয়েছে।

সংঘাতে বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে। ইউক্রেন সরকার বলছে, রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ৮ হাজারের মতো বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। তবে জাতিসংঘ বলছে, হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

সংস্থাটির মতে, পরিচয় শনাক্ত করা গেছে, শুধু এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা প্রকাশ করেছে ইউক্রেন সরকার। যুদ্ধের মধ্যে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করা অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন। বেসরকারি হিসাবমতে, বেসামরিক নিহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ।

বাস্তুচ্যুতি

সংঘাতে ইউক্রেনের অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর গত ১২ মাসে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের বেশির ভাগই ইউরোপে পাড়ি জামিয়েছে।

ইউএনএইচসিআর বলছে, প্রায় ৮০ লাখ মানুষ শরণার্থী হিসেবে ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ৫০ লাখের মতো আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে। ৬০ লাখের মতো অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়েছে। অর্থাৎ দেশের সংঘাতকবলিত এলাকা ত্যাগ করে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে তারা।

সংঘাতের কারণে রাশিয়ার একটা বিশাল সংখ্যক মানুষ দেশত্যাগ করেছে। সংখ্যাটা অন্তত ৫ লাখ। প্রধানত গত বছরের শেষ দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে ‘রিজার্ভ সেনা’ মোতায়েনের ঘোষণা দেয়ার পর দেশ থেকে পালায় তারা।

আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি

সংঘাতে উভয় দেশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এক প্রতিবেদনমতে, ২০২২ সালের মধ্যেই ইউক্রেনের জিডিপি ৩০ শতাংশ সংকুচিত হয়। বিপরীতে রাশিয়ার অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ২.১ শতাংশ।

রাশিয়ার ক্ষতি কম হওয়ার কারণ চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশকে বাণিজ্য সহযোগী হিসেবে পেয়েছেন পুতিন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ব্যাপক পরিমাণ আর্থিক সহায়তা ইউক্রেনের ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন