হোম রাজনীতি এক-এগারোর ভয়াবহ শিকার বিএনপিই: মির্জা আব্বাস

এক-এগারোর ভয়াবহ শিকার বিএনপিই: মির্জা আব্বাস

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 13 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
এক-এগারোর সঙ্গে বিএনপিকে যুক্ত করে ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে অভিযোগ করে এর পরিণতি শুভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপিকে যারা ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন– এটার পরিণতি ভালো হবে না।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) এক দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এক-এগারো নয়, যদি আপনারা এই ৫ আগস্টের পরে এই ধরনের কথাবার্তা, সংঘাত-বিভেদ সৃষ্টির কথা আজ বলতে থাকেন তাহলে কিন্তু কোনও দিন গণতন্ত্রের চেহারা দেখবেন না। আমি বলবো, এই বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে দেশটাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেন।’

রাজধানীর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই দোয়া মাহফিল হয়। এর আগে সকালে বনানী কবরস্থানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবসহ নেতাকর্মীরা তার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রয়েছে মিলাদ মাহফিল। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে কোকো।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘একটা দল আছে, যেটার নাম বলবো না। ওই যে বলে না গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল… ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। এবং তারা এমন ভাব করছে যেন কিছুই জানেন না… ভাজা মাছটিও উল্টিয়ে খেতে জানে না। না জেনে পুট করে বিএনপির সম্বন্ধে দুই-একটা কথা বলে ফেলেন। যাই হোক, আমি কারও সমালোচনা করবো না।”

আব্বাস বলেন, ‘‘আজকে বহু মত, বহু পথ, বহু টেলিভিশন, বহু সংবাদপত্র। আর ইদানীং কথা বলার সুযোগ পেয়ে বহু কথা বিএনপির বিরুদ্ধে, আমাদের দলের বিরুদ্ধে বলছে। আমাদের দুই-একজন নেতা তার নিজ দায়িত্বে দুই-একটা কথা বলে থাকতে পারেন হয়তো কোথাও… আমি ঠিক শুনি নাই… আমি দেশের বাইরে ছিলাম। ইদানীং দেখলাম বহু লোক বহুভাবে কথা বলছেন… কী বলছে? কেউ বলছে, বিএনপি নাকি ওয়ান-ইলেভেন আনার পাঁয়তারা করছে।”

‘‘তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ২০০৭ সালের এক-এগারোর ভয়াবহ পরিণতি বিএনপির চাইতে কেউ বেশি ভোগ করে নাই। বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী… সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত ওই এক-এগারোর ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পায় নাই। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে…।’’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আজকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হঠাৎ করে যেমন মুখে নতুন কথা ফুটলে বাচ্চারা যেভাবে কথা বলে… আবোল-তাবোল প্রলাপ বকতে থাকে… অনেক দল… অনেক ব্যক্তি যারা আজকে কথাবার্তা বলছেন… এমনভাবে কথাবার্তা বলছেন যে- আমি মাঝে মাঝে হঠাৎ যখন সুযোগ হয় টেলিভিশন দেখি, ওনাদের কথাবার্তায় মনে হয় বিএনপি যেন আওয়ামী লীগের দোসর। বিএনপিকে আওয়ামী শিবিরের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

‘‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ভারতের দোসর আওয়ামী লীগ, তাদের দিকে যারা বিএনপিকে ঠেলে দিতে চায়, নিজের চেহারা আয়না দিয়ে দেখুন, নিজের অন্তরটা আয়না দিয়ে দেখুন… দেশবাসীকে আর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।”

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে, এখনও যারা এখানে আছেন… আমাদের রিজভীসহ (রিজভী আহমেদ)… রিজভী তো পঙ্গু হয়ে গেছে… অকালে মৃত্যু হয়ে গেছে ছেলেটার… এবং আমরা… আমার নিজের পরিবারের কথা যদি বলি, আমার জেল হয়েছে ১১ বছর, আমার স্ত্রীর জেল হয়েছে ১৬ বছর, আমার ছোট ভাইয়ের (মির্জা খোকন) ৮ বছর জেল হয়েছে… ১৭ বছর বিদেশে থেকে আজকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছে…। এই নিপীড়ন শুধু আমার পরিবার নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি বিএনপির নেতাকর্মীর ওপর এই নিপীড়ন হয়েছে।”

‘‘আজকে আমাদের ঠেলে দিতে চাচ্ছেন অন্য শিবিরে। উদ্দেশ্যটা কী? আওয়ামী লীগের সিল মারতে চান। আমাদের তাড়াতে চান… এই কথা কখনও চিন্তা করবেন না। এ দেশের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, এ দেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, এ দেশের অতন্দ্র প্রহরী আমার এই দলের নেতাকর্মী ভাইয়েরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য।”

বুদ্ধি-প্রজ্ঞা দেশ গঠনে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিলে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনেকে বলেন, বিএনপি শুধু নির্বাচন নির্বাচন করে…। আরে ভাই, নির্বাচন নির্বাচন করি না। কিছু কিছু বিএনপির ব্লগার ভাইয়েরা আছে… বিদেশ থেকে দেশ পরিচালনার চেষ্টা করেন। আপনারা যা বলেন, মনে হয় তাই হতে হবে দেশে।’

‘আরে ভাই, আপনাদের প্রতিটা মানুষকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, আপনারাও আমাদের চেনেন। আপনারা জ্ঞান-গরিমায় যথেষ্ট উন্নত… অনেক লেখাপড়া আপনারা করেন। কিন্তু এই সমস্ত জ্ঞান-গরিমা-গুণ, এই সমস্ত বুদ্ধি বলে এমন কিছু করবেন না যাতে জাতির মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টি হয়। দয়া করে দেশে শান্তি আনার চেষ্টা করেন।’

তিনি বলেন, ‘‘আপনারা কথা বলতে জানেন, আপনাদের বুদ্ধি আছে… আপনাদের বুদ্ধি-প্রজ্ঞা দেশ গঠনে কাজে লাগান। বিএনপিকে দোষারোপ কইরেন না। ”

‘‘এ দেশের স্বাধীনতার জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জীবন দিয়েছেন, এ দেশের স্বাধীনতার জন্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবারের চরম ক্ষতি হয়েছে, এ দেশের স্বাধীনতার জন্য বিএনপির কর্মী বাহিনী আজকে ধ্বংস হওয়ার পথে। সুতরাং বিএনপির মতো দেশপ্রেমিক একটি দল বাংলাদেশে এই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয় নাই… নতুন করে কখনও হবে কিনা আমি জানি না।”

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘অনেকে বলেন, নতুন একটা দল হচ্ছে, বিএনপি নাকি জেলাস করছে। এই কথা যারা বলেন, তারা জাতির শত্রু। নতুন দল হবে কিংবা হবে না, সেটা যারা করতে চায় তাদের ওপর নির্ভর করে।”

‘‘দল ঘোষণা হওয়ার পরে বিএনপির ভূমিকা কী হবে সেটা দেখবেন। আমরা নতুন দল হলে স্বাগত জানাই। যারা দল করবেন তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশটাকে পরিচালিত করবেন, আমরা সরে যাবো প্রয়োজন পড়লে। কিন্তু ওই রকম উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না।”

দোয়া মাহফিলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহানগর বিএনপি দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজিব আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন