হোম রাজনীতি একশ প্রেসিডিয়াম সদস্য এলেও ভোট কাটতে পারবে না, জাফর উল্লাহকে নিক্সন

রাজনীতি ডেস্ক:

পরাজয় বুঝতে পেরে এখন এসপি, ওসির দোষ দিয়ে কাজী জাফর উল্লাহ বাহানা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত দিনে এই অঞ্চলে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন তাদের দুঃশাসন ও অবহেলার কারণেই কিন্তু ২০১৪ সালে আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। যে কারণে আপনারা আমাকে ভোট দিয়েছিলেন, তার শতভাগ না পারলেও ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কাজ আমরা করেছি। একশভাগই সম্পন্ন করতে পারতাম যদি করোনাকালীন সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা না হতো। তারপরও আমি যা বলি তা করার চেষ্টা করি।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নে নির্বাচনী জনসভায় একথা বলেন নিক্সন চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে নেমেছি, আমাদের বিপক্ষেও একজন (কাজী জাফর উল্লাহ) নির্বাচন করছেন। গতকাল উনার বক্তব্য শুনলাম, এসপিকে (পুলিশ সুপার) নিয়ে উনার সমস্যা। এসপি উনার কোনো কথাই শোনে না।

এসপি সাহেব আসলে উনার কথা শোনা লোক না। এসপি সাহেব দিপক মজুমদার না, এসপি সাহেব রাজা না, এসপি সাহেব মিরণ না। এসপি সাহেব একজন পুলিশ সুপার। তার দায়িত্ব একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করা। উনি নিজের মুখেই গতকাল দুইটা কথা বলেছেন, পুলিশ উনার কথা শোনে না, পুলিশ আসলে উনার কথা শোনার জন্য না। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে, পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যা যা করা দরকার তাই করবেন।’

নিক্সন বলেন, ‘তিনি আরেকটি কথা বলেছেন, আমার কইলজা কাইটা রক্ত বের হলেও টাকা খরচ করব না। আসলে উনি খরচ করলেই কী আর খরচ না করলেই কী। উনি কেমন খরচ করেন তা আমরা জানি। উনি বলেছেন, আমি নাকি উনাকে মান্দার গাছে উঠাইতে চাই, আসলে উঠাইতে চাই না, আমার চাচা মান্দার গাছে উইঠা বইসাই আছে। এটা আমি উঠাইনাই, উনার কর্মে উঠাইছে। উনি বিপদের দিনে মানুষের পাশে থাকবে না, করোনার সময়ে মানুষ যখন বিপদে তখন দুই বছরেও উনি এলাকায় আসে নাই। একদিনও আসে নাই যে এলাকার মানুষ বেঁচে আছে না মরে গেছে। কিন্তু সাড়ে চার বছর পর উনি নৌকা নিয়ে আইসা কবে নৌকা নৌকা। চাচা নৌকাটা আপনার কাছে রাখেন, আপনারে নৌকা ঠিকই দিছে, কিন্তু বৈঠাটা আমারে দিছে। আপনি গাঙ্গে নেমে তালবেতাল হারায় ফেলছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুইবার হারাইছি এবারও হারবেন হ্যাটট্রিক হবে। আমারে বৈঠাটা দিয়ে দেয়, আমি কলাগাছের ভেওয়া বানাইয়া বৈঠা দিয়ে বাইয়া বাইয়া পার হয়ে যাই। আপনার যদি বুদ্ধি না থাকে তাহলে বৃদ্ধি কি আমি দিব? আরে নৌকা নিছেন, বৈঠাটা নিয়ে আইতেন। আপনি দশদিন ঢাকায় বইসা আছেন। আর ইলেকশন বাকি আছে দশদিন। ২৫টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা আপনি কীভাবে ইলেকশনটা করবেন। আপনি আগে থেকেই ফলাফল বুঝতে পাইরা এখন এসপির দোষ, ওসির দোষ নানা লোকের দোষ দিয়ে বাহানা শুরু করছেন।’

নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘যখন ফুটবল খেলা হয় তখন গোল খাওয়ার পর রেফারির দোষ। চাচা এখন দোষ খুঁজতাছে। কয়দিন পর ভোট হবে, ভোটের পর চাচায় কবে নিক্সন সব ভোট কাইটা নিয়ে গেছে। উনি এখন দোষ চাপাচ্ছেন। আসলে কারোই দোষ না, দোষ আপনার। আপনি এলাকার মানুষের সঙ্গে যে ব্যবহার করছেন, যেভাবে তাদের অবহেলিত রাখছেন, চল্লিশটা বছর তাদের রাস্তাঘাট ব্রিজ কিছুই করেন নাই সেই পাপে আপনারে ধরছে। আপনি চাচা বন্দি কইরা রেখে এমপি নমিনেশন নিছেন তার বরদোয়ায় আপনারে ধরছে। কোনো প্রশাসনই আপনারে কিছু করবে না, আপনি যখন দেখছেন পরাজয় নিশ্চিত তখন এসব বলছেন। উনি কথায় কথায় কয় নিক্সন তোমার হারামের টাকা, চাচা আমার হারামের টাকা কামাই করার বয়স হয় নাই। আপনি যে কতো হারামের টাকা কামাই করছেন তা আমরা কেন পত্রিকা খুললে পানামা কেলেংকারি, কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছেন সেইটাতো পত্রিকায় উঠছে।’

তিনি বলেন, ‘আপনি হলেন হারামের টাকার রাজা। আপনি আমার মতো বাচ্চা ছেলেরে কন যে আমার হারামের টাকা। আপনার টাকাতো দুধে ধোয়া, তো আপনি এই দুধে ধোওয়া কিছু টাকা মানুষের জন্য খরচ করেন। গরিব দুঃখী মানুষরে দেন। করোনার সময় আইসা একটু চাল, ডাল দিতেন তাওতো দেবেন না। আপনার আটাত্তর বছর বয়স আপনি আইছেন বৈঠা ছাড়া নৌকা নিয়ে। নৌকার আসল মালিক আমরা, আমরা নৌকার জন্য রক্ত দিছি। আমি এখনও নৌকার জন্য ঢাকার রাজপথে সংগ্রাম করি। আর আপনি এসি রুমে কম্বল মুড়ি দিয়ে হুইয়া থাকেন। কেউ আপনারে টিভিতে দেখে নাই যে আপনি আন্দোলনে নামছেন। আপনি ভণ্ডামি করেন, আজে বাজে কথা বলেন, মনে করেন ভোট মনে হয় বারতাছে। দশদিন ঢাকায় খাইকা আইছেন, আর নির্বাচনের আছে নয় দিন, দোষ কার এসপি’র, দোষ কার ওসির, দোষ কার নিক্সনের। উনি বলেন, আমি নাকি নির্বাচনে ভোট কাইটা বক্সে ভরে রাখছিলাম। জনগণের ভালোবাসায় আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। উনি খামাখাই আমারে নিয়ে বাজে কথা বলেন। আমি একটা কথা বলবো, উন্নয়নে যদি ভোট হয় তাহলে সেই ভোটের হক আমার। আমি এলাকার মানুষের সঙ্গে যে সম্পর্ক তৈরি করছি, তা উনি করতে পারে নাই। এলাকার মানুষ আমারে ভালোবাসে। একটি শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবার সঙ্গে এমপির সম্পর্ক কী হয় তা আমি তৈরি করছি, আমি আসার আগে এই সম্পর্ক ছিল হাত মিলিয়ে টিস্যু দিয়ে মোছার।’

নিক্সন বলেন, ‘উন্নয়ন হইলে সে উন্নয়নের হক আমার, যদি মূল্যায়ন হয় সম্মান ইজ্জত পান সেই হকও আমার। আমি যদি নির্বাচন না করতাম তাইলে উনি একদিনের জন্যও আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসতো না। আমি আপনাদের ভোটের অধিকার ফেরত দিছি। আপনাদের জন্য দশটি বছর কষ্ট করছি। তাই অনুরোধ আপনারা আমার জন্য গ্রামে নামেন মানুষের কাছে ভোট চান। আপনারা সকলেই এক একজন নিক্সন চৌধুরী। আমার জন্য ভোট চাইতে গেলে কারো কাছে আপনাদের লজ্জা পেতে হবে না। ইনশাল্লাহ এবার উনার (কাজী জাফর উল্লাহ) জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সাথে হ্যাটট্রিক হবে। একটা হ্যাটট্রিক নয়, দুইটা হ্যাটট্রিক হবে, একটা আমার জয়ের আর একটি উনার পরাজয়ের হ্যাটট্রিক।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা সকলেই নিক্সন চৌধুরী। উনার মতো একজন নয়, একশ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য এলেও ভোট কেটে নিতে পারবে না। ৭ জানুয়ারি ভোটে সকলে ঈগল প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। আমরা এই জয়ের মালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেব।’

এসময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন, ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন