হোম অর্থ ও বাণিজ্য একদিনে আড়াই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

বাণিজ্য ডেস্ক:

অবশেষে সরকার পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার (৫ জুন) সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে মোট ২১০টি আমদানি অনুমতিপত্র (ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি) ইস্যু করা হয়েছে। এসব আইপির বিপরীতে সরকার একদিনে সর্বমোট ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে আইপিতে টেকনিক্যাল ত্রুটি থাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ সোমবার সকাল থেকে বন্দর দিয়ে দেশের ভেতরে আনা যায়নি। সন্ধ্যা নাগাদ কিছু পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করবে বলে আশা করছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, বাজারে সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিনই বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এপ্রিলে রোজার ঈদের আগেও ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বর্তমানে ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। আমদানি বন্ধ থাকলেও দেশে প্রচুর উৎপাদন হয়েছে। তাই পেঁয়াজের দাম এত বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও কারণ না থাকলেও বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতি যখন সীমা অতিক্রম করে তখনই পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত জানিয়ে রবিবার (৪ জুন) কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ সব ধরনের ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানির ঘোষণায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৯৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় নেমেছে। সোমবার দিনের শুরুতেই কেজিপ্রতি ৭৫ টাকায় বিক্রির জন্য দর দেওয়া হয়েছে। তবে এই দামেও পেঁয়াজের ক্রেতা মিলছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন পর্যাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বেশি মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত করেছে। এতে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজার বিবেচনায় পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানির ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি যেহেতু কৃষি মন্ত্রণালয় দেয়, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

এদিকে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ পচনশীল ফসল হওয়ায় বেশি দিন রাখা যায় না। হয় শুকিয়ে যায়, নয়তো পচে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পেঁয়াজের যদি সেলফ লাইফ বাড়ানো যেতো, তাহলে দেশে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে, তা দিয়েই বাজারের চাহিদা মেটানো যেতো। বাজারের মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে পেঁয়াজের বাজার যখন অস্থির হতে শুরু করে ঠিক সেই সময়েই আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদানের ব্যবস্থা নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য-৫ শাখার যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামীমা আকতারের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি গত ১৭ মে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কৃষদের দোহাই দিয়ে সে চিঠি আমলে নেয়নি কৃষি মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখ্য, টিসিবির তথ্যানুযায়ী, প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম একমাস আগে ৩০ টাকা ছিল, যা গত সপ্তাহে ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে এবং বর্তমানে ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি করে স্থিতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।’

অপরদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কৃষকের কাছে, গুদামে ও আড়তদারের কাছে কী পরিমাণ পেঁয়াজ আছে, তা দেখতে ইতিপূর্বে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খোঁজ-খবর নিয়েছে। মাঠ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে যে দেশে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত আছে। তবে দাম আরও বাড়বে—এমন আশায় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ বিক্রি করছে না।

জানা গেছে, পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন করছে রোডম্যাপ। এতে সাফল্যের দাবি করা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টন। দুই বছর আগে যেখানে উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টনের মতো, এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ লাখ টনের মতো।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, “পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় মধ্যম আয়ের ও সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত কৃষকের স্বার্থটা দেখেছি। কারণ, গত বছর কৃষকরা দাম কম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে প্রায় ২ লাখ টনের মতো। আমরা উচ্চ পর্যায়ে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করেছি। গভীরভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করেছি। তাই পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত দিয়েছি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পান, সেজন্য মূলত পেঁয়াজের ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন যেহেতু ভোক্তারা বাজারে গিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই।’ আমদানির পর অচিরেই পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। এ বছর ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন