হোম জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান অনুসরণ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় ডেস্ক :

পরিবেশ রক্ষায় টেকসই উন্নয়ন অর্জনে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পরিবেশেরে সঙ্গে সমন্বয় না করলে উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না। সুতরাং, আমাদের এটি মাথায় রেখে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের দিকে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (৫ জুন) সকালে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২২’ এবং ‘জাতীয় বৃক্ষ রোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা ২০২২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

তিনি বলেন, সরকার যখনই কোনো উন্নয়ন কর্মসূচি নেয়, প্রতিটি প্রকল্পে একটি শর্ত থাকে, তা হলো–এই উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো গাছ কাটা হলে পাঁচ গুণ বেশিসংখ্যক গাছ সেখানে লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে সোনাদিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব গাছ হয়েছিল, বিএনপি সরকারে এসে সেখানে মাছের ঘের করতে শুরু করে। এমনকি সুন্দরবনের ভেতরে ঘষিয়াখালী খাল, যেটা জাতির পিতার কাটা, সেটা পশুর নদী হয়ে সাগরে পড়েছে। ওই খাল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মোংলা পোর্টও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি সরকার। সুন্দরবনের প্রায় ২৫০ খালের মুখ বন্ধ করে সেখানে চিংড়ি চাষ করা হতো। সেখান থেকে আমরা প্রায় ১০০ খাল উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আমি আহ্বান করব, বাকি খালগুলো যেন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের ভেতরে শ্যালা নদী। এখানে কিন্তু আমাদের ডলফিন থেকে শুরু করে যেসব পশু আছে, তারা পানি খায়। আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ওই নদীতে পানি খায়। আমাদের জীববৈচিত্র্য ওখানে রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ঘষিয়াখালী খাল বন্ধ করে দিয়ে জাহাজগুলো ওই শ্যালা নদী দিয়ে যাতায়াত শুরু করে। আমি সরকারে আসার পর (দ্বিতীয় দফা) সেই খাল আবার কেটে দিয়েছি। কিন্তু ঘষিয়াখালী খাল টিকে থাকবে তখনই, যখন বাকি খালগুলো সুন্দরবনের ভেতর থেকে উন্মুক্ত করা হবে।

দেশের বনভূমি ১১ ভাগ থেকে তার সরকার আজ ২২ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবাদি জমি সংরক্ষণের জন্য সরকার নির্বিচারে কলকারখানা স্থাপন রোধে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় দেশের বনভূমি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, আমাদের বনভূমি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নের কাজও করে যেতে হবে। সেদিকে লক্ষ রেখেই আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য দেশটাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামাজিক বনায়নের কাজটাও ব্যাপকভাবে করে যেতে হবে। এতে যেমন দরিদ্র জনগোষ্ঠী লাভবান হয়। এখানে তারা কেবল গাছ লাগায় না, এর সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। তাই এখন ৭০ ভাগ লভ্যাংশ প্রদান করা হচ্ছে। কাজেই এ কাজগুলো আরও ব্যাপকভাবে করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ জুন আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রতিবারের মতো এবারও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করব।

তিনি বলেন, আমাদের কৃষক লীগ, যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠন ব্যাপকভাবে এই বৃক্ষরোপণ করে। শুধু করেই না, করার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে তারা ছবিও পাঠায়। এটা বাধ্যতামূলক। আর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনকালে তার সরকার ও দলের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের যত স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতরয়েছে, এর সীমানা চত্বরে আমরা যদি ব্যাপকভাবে বৃক্ষ লাগাতে পারি, তাহলে পরিবেশটা যেমন রক্ষা হবে, তেমনি ফলফলাদিও গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা বিধানে তার সরকার শতবর্ষ মেয়াদি ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং অংশীজনের মাঝে ‘পরিবেশ পদক ২০২০ ও ২০২১,’ ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন, ২০২০ ও ২০২১’, ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার, ২০১৯ ও ২০২০’ এবং বিজয়ীদের মঝে সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক বিতরণ করেন।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের ওপর একটি তথ্যচিত্র পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বন গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকাশিত একটি গ্রন্থের মোড়কও উন্মোচন করেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন