আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
উত্তর কোরিয়ার সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সংঘর্ষের কথা নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বুদাপেস্টে ইউরোপীয় রাজনৈতিক কমিউনিটি সম্মেলনে তিনি জানান, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অবস্থানরত এই সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটেছে।
জেলেনস্কি বলেন, বর্তমানে প্রায় ১১ হাজার উত্তর কোরিয়ার সেনা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অবস্থান করছে। এর মধ্যে কিছু সেনা ইতোমধ্যে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছে। প্রাণহানি হয়েছে, এটি বাস্তব।
তবে তিনি কোনও পক্ষের প্রাণহানির পরিসংখ্যান স্পষ্ট করেননি।
সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এ সপ্তাহের শুরুতে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে একটি সীমিত সংঘর্ষে কয়েকজন উত্তর কোরিয়ার সেনা নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতার প্রেক্ষিতে এই সংঘাত আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এই সহযোগিতার প্রতিক্রিয়া কীভাবে জানাবে, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন নির্বাচনের প্রতিক্রিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা প্রস্তুত। এতে ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের আলোচনা শুরুর সম্ভাবনাকে সামনে এনেছে।
এদিকে, ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত দ্রুত সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ শেষ করতে মাত্র ২৪ ঘণ্টা লাগবে এবং ইউক্রেনকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে।
তবে জেলেনস্কি রাশিয়াকে ছাড় দেওয়ার যে কোনও প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে আসছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের প্রস্তাবে বর্তমান অবস্থাকে স্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এর ফলে রাশিয়া দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ধরে রাখতে পারবে। বিশেষ করে ডনবাস ও ক্রিমিয়া অঞ্চলগুলো রাশিয়ার হাতে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের মাত্রা নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক প্রধানের মতে, যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেন সবচেয়ে বড় আক্রমণের মুখে রয়েছে। মস্কোও ধারাবাহিক ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাশিয়া প্রায় প্রতিদিনই দূরপাল্লার ড্রোন পাঠাচ্ছে এবং কিছু ড্রোন কৌশলগতভাবে ক্ষেপণাস্ত্রবিহীন রাখা হচ্ছে যাতে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
জেলেনস্কি বলেছেন, বিশ্ব নেতারা আমাদের দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান শুনছেন না। আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে আরো একটি দেশের সেনাবাহিনী। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের অস্ত্রের উন্নতি না হলে উত্তর কোরিয়ার আরো বড় পরিসরে ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ১০ হাজার উত্তর কোরিয়ার সেনা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে রয়েছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ না করলে উত্তর কোরিয়ার এই বাহিনীর ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পাবে।
সূত্র: সিএনএন