হোম অন্যান্যসারাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ৬ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর প্রেস রিলিজে পরিবর্তন

ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মধ্যরাতে মেডিকেলে ভাঙচুর ও নবীন শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিং এর ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে তিন শিক্ষার্থীকে স্থায়ী এবং অপর তিনজনকে ১ বছরের জন্য সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বেলা ১১টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও এন্টি র‌্যাগিং ভিজিল্যন্স কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ এবং ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে, র‌্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিকেলে প্রায় আড়াই ঘন্টা প্রধান ফটক অবরোধ করে আন্দোলন করেন তাদের বিভাগের সহপাঠীরা। এসময় বিকেল ৪ টার শিফটে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী বাসগুলো ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে আটকা পড়ে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, র‌্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনাই সেদিন ঘটেনি। এছাড়া অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। যা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়।

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ মুঠোফোনে শিক্ষার্থীদের বলেন, এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আন্দোলনের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার মো. সাহেদ হাসানের স্বাক্ষরিত এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়টি জানানো হয়।

প্রেস রিলিজে বলা হয়, ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় মেডিকেল ভাঙচুর ও র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না সেই মর্মে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা কর্তৃক ঘোষণাকৃত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন ঘোষণার বিষয়ে জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. আমানুর আমান বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। শৃঙ্খলা কমিটির সভায় কি হয়েছে তা আমি জানি না। উপাচার্য স্যারের মাধ্যমে যা এসেছে আমি তা প্রচার করেছি।

এর আগে, গত ১০ জুলাই মাদকাসক্ত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরী বিভাগে ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে মারধর এবং কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ উঠে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য, সালমান আজিজ ও আতিক আরমানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিনকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্ত কাব্যকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপর দুই শিক্ষার্থী সালমান আজিজ ও আতিক আরমানের উক্ত ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে, ২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও বিভাগীয় সভাপতিকে লিখিত অভিযোগ দেন দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন র‌্যাগিংয়ের সত্যতা মেলায় অভিযুক্তদের বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

র‍্যাগিং এর ঘটনায় হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মিজানুর রহমান ইমন ও হিশাম নাজির শুভকে স্থায়ী এবং শাহরিয়ার পুলক, সাদমান সাকিব আকিব ও শেখ সালাউদ্দীন সাকিবকে ১ বছরের জন্য সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন