আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে লেখা চিঠিতে পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ও দুটি সূত্রের বরাতে এক্সিওস পোর্টাল এ কথা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিঠিটি পাঠানোর সময় থেকে বা আলোচনা শুরু হওয়ার সময় থেকে দুই মাসের আল্টিমেটাম শুরু কি না, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু তেহরান যদি ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং সমঝোতা না করে, তাহলে ইরানের পরমাণু স্থাপনার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
গত চার বছরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি অনেক এগিয়ে গেছে। দেশটি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি আছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মতে, ইরানের ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ছয়টি পরমাণু বোমা বানানোর জন্য যথেষ্ট। তবে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির আগ্রহের কথা অস্বীকার করেছে।
দুই সপ্তাহ আগে ফক্স নিউজের মারিয়া বার্তিরোমোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে ইরানি নেতাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
এর একদিন পর ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে ‘শেষ মুহূর্তে’ পৌঁছেছে। আমরা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দিতে পারি না। খুব শিগগিরই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ কয়েকদিন আগে আবুধাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদের (এমবিজেড) কাছে এই চিঠি পৌঁছে দেন। এর একদিন পর এমবিজেডের দূত আনোয়ার গারগাশ তেহরান সফর করেন এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করেন।
সূত্রগুলো বলছে, খামেনিকে লেখা ট্রাম্পের চিঠির ভাষা ছিল ‘কঠোর’। একদিকে নতুন পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে, অন্যদিকে ইরান যদি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রাখে তাহলে ‘পরিণতি ভোগ করতে হবে’ বলে হুমকি দিয়েছে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা ও ওয়াকিবহাল একটি সূত্র অ্যাক্সিওসকে জানিয়েছে, চিঠিটি ইরানিদের কাছে হস্তান্তরের আগে হোয়াইট হাউস ইসরায়েল, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি মিত্র দেশকে এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত করেছিল।
এসব বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে অ্যাক্সিওস যোগাযোগ করলে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। জাতিসংঘে ইরানি মিশনও মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
গত সপ্তাহে আলি খামেনি ট্রাম্পের চিঠি এবং আলোচনার জন্য তার প্রস্তাবকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেন।
এরপর জাতিসংঘে ইরানি মিশন এক্স-পোস্টে একটি বিবৃতি জারি করে এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। বিবৃতিতে বলা হয়, আলোচনার উদ্দেশ্য যদি হয় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সম্ভাব্য সামরিকীকরণ নিয়ে উদ্বেগ নিরসন করা, তাহলে এ ধরনের আলোচনা বিবেচনসাপেক্ষ হতে পারে।
জাতিসংঘে ইরানি মিশন বলেছে, আলোচনার উদ্দেশ্য যদি হয় ‘ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করে দিয়ে দাবি করা যে, বারাক ওবামা যা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তা এখন সম্পন্ন হয়েছে, তাহলে এ ধরনের আলোচনা কখনোই হবে না।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সপ্তাহের শুরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিল, ট্রাম্পের চিঠিটি এখনো অধ্যয়ন করা হচ্ছে। ইরান কি প্রতিক্রিয়া জানাবে, কীভাবে জানাবে, তা ঠিক করা হচ্ছে।
গত সোমবার ট্রাম্প বলেন, ইয়েমেনের হুথিদের থেকে আর কোনো হামলা এসে যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো ইরান থেকে আসছে বলে বিবেচনা করবে। ইরানকে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ রোববার বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র, অস্ত্রায়ন ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সব উপাদান ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় তারা বিভিন্ন পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে।