আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সিরিয়ার পাশাপাশি ইরাক থেকেও সেনা প্রত্যাহার করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে এরই মধ্যে পরিকল্পনা শুরু করেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের উপস্থিতির অবসান ঘটাতে শিগগিরই আলোচনা শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাক সরকার। প্রতিবেদন মতে, এই প্রক্রিয়া গত বছরের আগস্টেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) এক বিবৃতি জারি করে বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে’ আলোচনা শুরু হবে। প্রতিবেদন মতে, গত আগস্টে ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের কর্মকাণ্ডের ইতি টানতে এবং এরপর কিভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে শিগগিরই আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাক।
এ ব্যাপারে গত বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ইরাকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আলিনা রোমানোস্কির মাধ্যমে হস্তান্তর করা এক চিঠিতে ইরাকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইনের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরুর উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করতে সম্মত হয়েছে বাগদাদ ও ওয়াশিংটন। পর্যায়ক্রমে সামরিক জোটের উপস্থিতির অবসান ও সেনা প্রত্যাহারের একটি সময়সূচি নির্ধারণ করাই হবে সেই কমিটির কাজ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর বিরামহীন হামলার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও সামরিক কর্মকাণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে তারা নিজেদের ঘাঁটিগুলো রক্ষা করতে পারছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এতে এই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের প্রভাব ব্যাপকভাবে হ্রাস করবে এবং ইরান আরও শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয়ে উঠবে।
২০১৪ সালের জুনে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের উত্থান ঘটে। কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ দুটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। গোষ্ঠীটিকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ৮০টিরও বেশি দেশ নজিরবিহীন অভিযান শুরু করে।
তিন বছরের অভিযানে ২০১৭ সালে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করে যৌথ সামরিক জোট। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সিরিয়ায় এর চূড়ান্ত ঘাঁটিটিও মুক্ত হয়।
একইভাবে ইরাকেও আইএস প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে এরপরও আইএস দমনের নামে দেশ দুটিতে বেশ কিছু মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখা হয়েছে। তবে সম্প্রতি সেনা প্রত্যাহারের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ইরাকের সরকার বলেছে, আইএস পরাজিত হয়েছে। এতে জোটের কাজও শেষ হয়ে গেছে। এখন অবিলম্বে ইরাক ছাড়তে হবে।
গাজা সংঘাতের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা জোরদার করেছে ইরানপন্থি ‘রেজিস্ট্যানস ফোর্স’ তথা প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর জোট পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিট বা হাশদ আশ-শাবির যোদ্ধারা। হামলার ঘটনা ঘটছে সিরিয়ার মার্কিন ঘাঁটিতেও। এসব হামলার কারণে মার্কিন সরকার নতুন করে চাপে পড়েছে।
চাপের মুখে সিরিয়া ও ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে জো বাইডেন প্রশাসন। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফরেন পলিসি জানায়, সিরিয়া থেকে সেনা সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সিরিয়ায় ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হচ্ছে মার্কিন সেনারা। এমন পরিস্থিতিতে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন।
আফগানিস্তান আগ্রাসনের দুই বছর ২০০৩ সালে ইরাকে আক্রমণ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে ইরাক কার্যত ধ্বংস হয়ে যায় এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতাচ্যুত ও আটক হন। এরপর এক প্রহসনের বিচারে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়।
আগ্রাসন শুরুর প্রায় ৮ বছর পর ২০১১ সালে আংশিক সেনা প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তিন বছর পর ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের উত্থানের প্রেক্ষিতে আবারও হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট।