হোম অর্থ ও বাণিজ্য ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কনক্রিট ব্লক আনছে ম্যাক্স গ্রুপ

ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কনক্রিট ব্লক আনছে ম্যাক্স গ্রুপ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 13 ভিউজ

বাণিজ্য ডেস্ক:

বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রীর প্রসার বাড়াতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় অটোক্লেভড এয়ারটেড এরেটেড কংক্রিট ব্লক কারখানা নির্মাণে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ম্যাক্স গ্রুপ। লাল ইটের বিকল্প হিসেবে এই কনক্রিট ব্লক ব্যবহার হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) মানিকগঞ্জে পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানায় ম্যাক্স গ্রুপ।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, উপকরণ ও ব্যয়সাশ্রয়ী নির্মাণ উপকরণ নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে কনক্রিট ব্লক ব্যবহার করলে ভবনের নির্মাণ খরচ ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। ম্যাক্সক্রিট লিমিটেড নামের নতুন কারখানাটি মানিকগঞ্জের জাগীরে নির্মিত হচ্ছে। ৩ লাখ ৬৫ হাজার ঘনমিটার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতাসহ, প্ল্যান্টটি ঈদুল আজহার পরে পূর্ণ উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ম্যাক্স গ্রুপ আরও জানায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ হাজার ৮৪০ মিলিয়ন সিএফটি উর্বর মাটি নষ্ট হয় শুধু মাটির ইট তৈরি করতে এবং এর ফলে ১১ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন টন কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন ঘটে। পোড়া মাটির ইট শুধু কার্বন নিঃসরণই করে না, খাদ্য উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব সুষ্টি করে।

পরিবেশ ও মাটির উর্বরতা রক্ষার্থে ২০২৫ সালের মধ্যে ইটভাটা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়াও পোড়া মাটির ইটের ব্যবহার কমাতে নির্মাণস্থলে বিকল্প ইট এবং ব্লক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। পরিবেশ রক্ষা করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলা করতে বাংলাদেশে এএসি ব্লক এবং প্যানেল প্রবর্তনের এই উদ্যোগ নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ম্যাক্স গ্রুপ।

নগরায়ন এবং নির্মাণ খাতের উন্নয়নের কারণে আবাসন খাতসহ অন্যান্য শিল্পখাত পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। সবুজ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, এমন একটি ধারণা যা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে; যার উদ্দেশ্য স্থায়িত্ব এবং সবুজায়ন বৃদ্ধি করা।
এ কারণে কংক্রিট ব্লকের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক এই শিল্পের উৎপাদন ধীরে হলেও এর বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মূল কাঁচামাল হচ্ছে- বালি, জিপসাম, সিমেন্ট, চুন, অ্যালুমিনিয়াম পেস্ট এবং পানি। ম্যাক্সক্রিট উন্নত মানের সাথে টেকসইয়ের বিষয়টিও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।

এমনিতেই দেশে আবাদি জমির পরিমাণ অপ্রতুল। ইটভাটার জন্য এই জমি আরও সংকুচিত হচ্ছে। ইটভাটা সংলগ্ন জমিও হারাচ্ছে তার উর্বরতা। দ্বিতীয়ত, ইট পোড়ানোর ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বৃক্ষসম্পদ। গাছ কাটা হচ্ছে ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য। তৃতীয়ত, ইটের ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া দূষিত করছে বাতাস এবং হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এটি কয়লা বা অন্যান্য জ্বালানীতে পোড়ানো হয় না। তাছাড়া, এএসি ব্লক উৎপাদনে কোনো বিষাক্ত গ্যাস বা অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ নেই। এসবকিছু বিবেচনায় বিশ্বমানের দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব বাড়ি নির্মাণে কাজ করতে যাচ্ছে ম্যাক্সক্রিট।

এএসি ব্লকের ওজন তুলনামূলক কম; যে কারণে নির্মাণকাজ সহজ করে তোলে। এছাড়াও ব্লক ইট শব্দ, অগ্নি ও তাপ নিরোধক। ইলেকট্রিক্যাল পাইপ বসানোর জন্য দেয়াল কাটা লাগে না। ইটের মতো অধিক পানি শোষণ করে না। এই ব্লক গাঁথুনির কাজে ব্যবহারের আগে ইটের মতো পানিতে ভেজাতে হয় না। কনক্রিটের ব্লকে নোনা ধরে না, ঘামে না, ডাম্প হয় না, ফাঙ্গাস পড়ে না বলে এটি দীর্ঘস্থায়ী। কনক্রিটের ব্লকে ইটের তুলনায় কম পুরুত্বের প্লাস্টারিং ব্যবহার করা হয়। বাড়ির ব্যক্তিগত ওজন ও নির্মাণ খরচ দুই-ই কমাবে। পরিবেশবান্ধব এবং ভূমিকম্প সহনশীল।

ব্লক ইট কৃষি জমি ও বনজ সম্পদের অপচয় রোধ করে। এতে কোন জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে না। প্রকৃতির উপর ভরসা না করে বছরব্যাপী উৎপাদন করা সম্ভব। শব্দ শোষণ ক্ষমতা বেশি অগ্নি, তাপ নিরোধক অধিক কার্যক্ষম। স্থায়ত্বিকাল ও কাঠামোগত ভারসাম্য বেশ ভাল।

ম্যাক্সক্রিট ব্লকের সুবিধা:

কম ওজন: কংক্রিট ব্লক বা ইটের তুলনায় এএসি ব্লকগুলো বেশ হালকা। এর কারণে এটি পরিবহন এবং ইন্সটল করা সহজ করে তোলে। শ্রম, খরচ এবং নির্মাণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনে।

খরচ-দক্ষতা: যদিও এএসি ব্লকের প্রাথমিক খরচ ইটের তুলনায় সামান্য বেশি হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার ক্ষেত্রে এটি অনেকগুণ এগিয়ে। নির্মাণের সময় বাঁচানো, ইট ও প্লাস্টারে মর্টার সঞ্চয়, কম শ্রম খরচ এবং ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণসহ বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। এটি একটি বিল্ডিংয়ের ২০ শতাংশ কাঠামোগত খরচ হ্রাস করে।

তাপ নিরোধক: এএসি ব্লকের অন্যতম গুণ হলো তার ব্যতিক্রমী তাপ নিরোধক বৈশিষ্ট্য। এই ব্লকগুলো ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে বেশ ভূমিকা রাখে। তাপ নিরোধক হওয়ায় গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে আরামদায়ক ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী।

শব্দ নিরোধক: এএসি ব্লক শব্দ নিরোধক গুণাগুণসম্পন্ন। শব্দরোধ করার ক্ষেত্রেও চমৎকার কাজ করে। ফলে বাইরের অতিরিক্ত শব্দ ঘরে প্রবেশ করে না।

অগ্নি প্রতিরোধক: এএসি ব্লক তার খনিজ গঠনের কারণে সহজাতভাবে আগুন-প্রতিরোধী। কাঠামোগত দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ায় এগুলো ৫/৬ ঘণ্টার জন্য উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।

পরিবেশবান্ধব: বাংলাদেশে গতানুগতিক তৈরি ইটের বহুল ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ইট তৈরিতে কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি বহুল ব্যবহৃত হয় এবং প্রচুর পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন হয় যা দেশের বনজ সম্পদ এবং কৃষি জমি হ্রাসের অন্যতম কারণ। এগুলো বালি, সিমেন্ট, অ্যালুমিনিয়াম পেস্ট এবং পানিসহ প্রাকৃতিক উপকরণ থেকে তৈরি।

সহজে নকশাযোগ্য: এএসি ব্লক নকশা ও পছন্দ অনুসারে সহজেই কাস্টমাইজড করা যেতে পারে। ফলে যেকোনো ডিজাইন তৈরি করার জন্য এগুলোকে কাটা এবং আকার দেয়া যেতে পারে।

নির্মাণ সময় কমায়: এএসি ব্লক কম ওজন হওয়ায় এটি দিয়ে ইটের গাঁথুনি দিতেও কম সময় লাগে। এই ব্লক গাঁথুনির কাজে ব্যবহারের আগে ইটের মতো পানিতে ভেজাতে হয় না। ফলে খুব দ্রুত সময়েই কাজ শেষ করতে পারে শ্রমিকরা। এতে সময় এবং খরচ উভয়ই বাঁচে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন