হোম আন্তর্জাতিক ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় কঠোর শর্ত উপস্থাপন করেছে রাশিয়া

ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় কঠোর শর্ত উপস্থাপন করেছে রাশিয়া

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 97 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কিয়েভ যদি যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়, তাহলে তাকে বড় অংশের নতুন ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। সোমবার (২ জুন) শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার সীমিত করতে হবে বলেও দাবি করেছে মস্কো। রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি স্মারকলিপিতে এমনটাই বলা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

রুশ সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সে প্রকাশিত স্মারকলিপি অনুযায়ী, যুদ্ধ নিষ্পত্তির জন্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ক্রিমিয়া এবং আরও চারটি অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। এসব এলাকা থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রত্যাহার করতে হবে।

এছাড়াও মস্কো চায় ইউক্রেন নিরপেক্ষ দেশ হোক। অর্থাৎ ন্যাটোতে যোগ না দিক— রুশভাষীদের অধিকার রক্ষা করুক। রুশ ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিক এবং নাৎসিবাদকে মহিমান্বিত করার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করুক। ইউক্রেন এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছে।

রাশিয়া যুদ্ধবিরতির জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছে। সেগুলোও ইউক্রেনের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না।

প্রথম বিকল্প: ইউক্রেনকে লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে—যার মধ্যে রাশিয়া কেবল লুহানস্ক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে। বাকিগুলোর ৭০ শতাংশ অংশ দখল করেছে।

দ্বিতীয় বিকল্প: ইউক্রেনকে সেনা পুনঃবিন্যাস বন্ধ করতে হবে। বিদেশি সামরিক সহায়তা, স্যাটেলাইট যোগাযোগ এবং গোয়েন্দা তথ্য গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে সামরিক আইন তুলে নিতে হবে এবং ১০০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন করতে হবে।

এই শর্তগুলো তুরস্কের ইস্তাম্বুল অনুষ্ঠিত আলোচনায় আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। আর এই বিষয়টি মস্কোর পুরোনো যুদ্ধলক্ষ্যে কোনও ছাড় না দেওয়ার অবস্থানকে স্পষ্ট করে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে ‘রক্তস্নান’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউক্রেন বারবার এই রুশ শর্তগুলোকে আত্মসমর্পণের সমতুল্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা মাত্র এক ঘণ্টার মতো দেখা করেন। ২০২২ সালের মার্চের পর দ্বিতীয়বারের মতো এমন শান্তি আলোচনায় বসলেন উভয় পক্ষ। আলোচনায় তারা যুদ্ধবন্দি বিনিময়, বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও গুরুতর আহতদের বিনিময় এবং প্রায় ১২ হাজার মৃত সেনার মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান এই বৈঠককে ‘দারুণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে ইউক্রেন, ইউরোপীয় মিত্র এবং ওয়াশিংটনের অনুরোধ সত্ত্বেও সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয়নি।

মস্কো বলেছে, তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি চায়, সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয়। কিয়েভ বলেছে, পুতিন শান্তিতে আগ্রহী নন। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, দুই পক্ষ যদি আলোচনায় অগ্রগতি না দেখায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তার মধ্যস্থতা বন্ধ করতে পারে।

এদিকে অনলাইন সংবাদ ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করবে না এবং কোনও আল্টিমেটাম মেনে নেবে না।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জানান যে, ইউক্রেন ইতোমধ্যে নিজস্ব শান্তির রোডম্যাপ তৈরি করেছে এবং রুশ প্রস্তাবনাটি তারা পর্যালোচনা করবে। তবে কোনও মন্তব্য এখনই করবেন না।

ইউক্রেন জুন শেষের আগেই আরও আলোচনা চায়। তবে উমেরভের মতে, কেবল জেলেনস্কি ও পুতিনের সরাসরি বৈঠকেই মূল বিরোধ মেটানো সম্ভব।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন