আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউক্রেনের আরেকটি বড় শহর ঘিরে ফেলছে রাশিয়ার সেনারা। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দোনেটস্ক প্রদেশের আভদিভকা শহরটিকে প্রতীকী এবং কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয়দের শক্তিশালী প্রতিরক্ষাবুহ্যের শহরটিতে প্রবেশের কাছাকাছি রয়েছে রুশ সেনারা।
ইউক্রেনীয়দের শক্ত ঘাঁটি বাখমুতের পর এটা হতে পারে বড় কোনো শহরের পতন। এটি রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাজধানী দোনেটস্ক থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার উত্তরে। তারপরেও শহরটিতে ইউক্রেনীয় সেনারা ব্যাপক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় এটি আক্রমণের জন্য রুশ সেনাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা এবং ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।
বাখমুতের মতো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহরের পর আভদিভকার পতন হলে যুদ্ধে বড় ধাক্কা খাবে ইউক্রেন। এর ফলে রুশ সেনারা আরও পশ্চিমদিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাবে বলে মনে করছেন সমরবীদরা।
গত বছর অভিযান শুরুর পর অল্প সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি উত্তর ও পশ্চিমের বিভিন্ন ফ্রন্টে ব্যাপক সাফল্য পায় রুশ সেনারা। এমনকি তারা দেশটির রাজধানী কিয়েভের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। কিন্তু পশ্চিমাদের সহায়তায় ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে কিয়েভ, সুমেসহ উত্তরাঞ্চলীয় ফ্রন্ট থেকে পিছু হটে রাশিয়া। এরপর উত্তরাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ খারকিভ এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চলের বড় ভূখণ্ড পুনর্দখল করে ইউক্রেন।
এই অবস্থায় রুশ কৌশলে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাড়াহুড়োর চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদি একটি যুদ্ধের পথে হাঁটে ক্রেমলিন। এরমধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং দুই পক্ষের ব্যাপক প্রাণহানির পর গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত শহর দখল করে নেয়া রাশিয়া। এই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আলোচিত ওয়াগনার বাহিনী।
কিন্তু গত বছর রাশিয়ার কাছে হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারের জন্য কিয়েভের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গ্রীষ্মকালীন পাল্টা আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয় রাশিয়া। এই পাল্টা আক্রমণে ন্যাটোর দেয়া অত্যাধুনিক ট্যাংক এবং সাজোয়া যানসহ ইউক্রেনের বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম ধ্বংস হয়। নিহত হন হাজার হাজার সেনা। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই পাল্টা আক্রমণে ক্রিমিয়া পর্যন্ত স্বাধীন করার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে ছোট কয়েকটি গ্রাম ছাড়া তেমন কিছুই অর্জন করতে পারেনি।
ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের সময় রাশিয়া পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ভূমিকায় থাকলেও সম্প্রতি প্রায় সব ফ্রন্টে আক্রমণ শুরু করেছে তারা। ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে হাতছাড়া হওয়া বেশ কিছু জায়গা এরই মধ্যে ফের দখলে নিয়েছে রুশ সেনারা। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় আক্রমণ হচ্ছে আভদিভকাকে ঘিরে। এরই মধ্যে শহরটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে রুশ সেনারা। স্থল এবং আকাশপথে সব ধরনের অস্ত্র দিয়ে হামলা হচ্ছে। শহরটিতে ইউক্রেনের সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইছে রাশিয়ার সেনারা। অন্যদিকে শহরটির দখল ধরে রাখখে মরিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে ইউক্রেন।
প্রায় এক দশক ধরে আভদিভকা শহরজুড়ে প্রতিরক্ষা স্থাপনা গড়ে তুলেছে ইউক্রেন। এছাড়া সেখানে মাটির নিচে টানেল এবং কমান্ড পোস্ট তৈরি করেছে তারা। এসব কারণে রুশ সেনারা দ্রুত অগ্রসর হতে পারছে না।
আভদিভকার পতন হলে দোনেটস্কে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে দেশটির সেনাবাহিনীও শঙ্কায় রয়েছে।
ইউক্রেনের শীর্ষ সামরিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, বরফ শীতল মাসগুলোতে আক্রমণের চেয়ে আত্মরক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ, পরের বছর নতুন করে আক্রমণের কৌশল পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে পুনর্মূল্যায়নের করতে হবে, অস্ত্রের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং নতুন করে সেনা সদস্য নিয়োগ দিতে হবে।
জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকোলে মিত্রোখিন আল জাজিরাকে বলেছেন, রুশ বাহিনীর বিভিন্ন দিকে আঘাত করবে, একটু একটু করে। তারা বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ সংগ্রহ করেছেন। সেইসাথে নতুন সৈন্যদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এগুলো তারা ব্যবহার করবে।
তিনি বলেন, রুশ বাহিনী আভদিভকা দখল করতে পারে। সম্ভবত বাখমুতের চারপাশে তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধারও করতে পারবে তারা। এছাড়া লিমান শহরের কাছে ঝেরেবেটস নদী পার হয়ে তাদের রসদ পৌঁছানোর পথও উন্নত করতে পারে।
রাশিয়া এগুলিকে শীতকালীন অভিযানের বিশাল বিজয় হিসেবে বিবেচনা করবে বলে মনে করেন মিত্রোখিন।