অনলাইন ডেস্ক :
বাসভবনে ঢুকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা ‘চুরির ঘটনা নয়’ উল্লেখ করে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানিয়েছেন, ‘এটি পরিকল্পিত আক্রমণ’।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর দিলু রোডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) মিলনায়তনে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সভাপতি বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের (অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন) অনেক সদস্য জীবন দান করেছেন। বিভাগ থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত এ সংগঠনের সদস্যদের জনগণের পাশে থেকে উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়, ভূমি ব্যবস্থাপনায়, নির্বাচন, পরীক্ষা পরিচালনা, দুর্যোগ ও ত্রাণ বিতরণ ইত্যাদি কাজ করতে হয়। জাতির ক্রান্তিকালে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা ও দেশ গঠনমূলক কাজে সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজ করাও এ সংগঠনের অন্যতম দায়িত্ব।’
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, কিছু কিছু দুর্বৃত্ত ও সমাজবিরোধী ব্যক্তি এ সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা বেআইনি কাজ করতে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা ও মামলা-মোকদ্দমা দায়ের করে সদস্যদের মনোবল দুর্বল করে দিচ্ছে। প্রকৃত অর্থে এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশ ও জনগণের।’
ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার বিষয়টি তুলে ধরে সভাপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে, তিনি রংপুর থেকে হেলিকপ্টারযোগে ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় এনে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে দুই দুর্বৃত্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’
কোনো কোনো মহল ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিতের জন্য ‘বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা’ বলে চালিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে দাবি করে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এটি কোনো চুরির ঘটনা নয়। কারণ দুর্বৃত্তরা কোনোপ্রকার জিনিস বা সম্পদ চুরি করেনি বা খোয়া যায়নি। এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণের ঘটনা এবং এর সঙ্গে আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম একজন সৎ, নির্ভীক কর্মকর্তা। তিনি কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল তার ওপর বেআইনি তদবিরে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
‘অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি’ বলেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘আরও একটি বিষয় আমরা আপনাদের অবহিত করতে চাই, ইতোমধ্যে আপনারা শুনেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুনের বিরুদ্ধে কতিপয় অবৈধ বালু উত্তোলনকারী ও একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির প্ররোচনায় ফৌজদারি আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিআইবির কাছে প্রেরণ করেছেন। অসংলগ্ন কথাবার্তায় ভর্তি এ রকম একটি আরজির ভিত্তিতে একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা নজিরবিহীন এবং দুর্ভাগ্যজনকও বটে।’
এভাবে যদি মামলা গ্রহণ করা হয় তাহলে জেলা প্রশাসন কী করে তার দায়িত্ব পালন করবে- প্রশ্ন রেখে হেলালুদ্দীন বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে মামলাটি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারসহ মিথ্যা মামলা দায়েরকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা পরিকল্পিত হলে, কারা আক্রমণ করেছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি জানান, তাদের (আক্রমণকারী মহল) বিষয়ে আঁচ করছেন। তবে তদন্তাধীন বিষয় হওয়ায় কারও নাম বলেননি তিনি।
এ সময় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মেজবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।