নিজস্ব প্রতিনিধি :
আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’ গ্রুপের সংঘর্ষে একজনের নিহত, উভয়পক্ষের ১০ জন আহত ও কমপক্ষে ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি চারটি মামলা দায়ের হয়েছে । ঘটনার পরপরই পুলিশ ১১ জরকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামীরা রয়েছে ধোরা ছোঁয়ার বাইরে ।
উপরন্তু ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত না থাকার পরও শরবত হত্যা মামলার বাদি সবুজ মোল্লা ও তার স্বজনরা চেয়ারম্যান ডালিমের ভাই ওবায়দুল্লাহ ডাবলুর দায়েরকৃত দু’টি মামলায় আসামী হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর গ্রামে গেলে নিহত শরবত মোল্লার স্ত্রী শেফালী খাতুন বলেন, এলাকার মুর্তিমান আতঙ্ক খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম। ঘের দখল, চাঁদাবাজি, খালের চর দখল, ঘেরের মাছ লুটসহ এমন কোন কাজ নেই যা ডালিমের লোকজন করে না।
প্রতিবাদ করতে যেয়ে অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই হামলা ও মামলা খেয়ে এলাকা ছেড়েছেন। এক মাস আগে পশ্চিম গদাইপুর বিলে মঞ্জুরুলের ঘের দখলের চেষ্টার তদন্তে এলে পুলিশের উপস্থিতিতে বোমা হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যান ডালিমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়।
একইভাবে গত ৮ এপ্রিল মঞ্জুরুলের ঘেরের দু’ কর্মচারিকে বেঁধে রেখে মাছ লুট করার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে ক্ষুব্ধ ছিল চেয়ারম্যান ডালিম ও তার লোকজন। এরই জের ধরে ৯ এপ্রিল সবেবরাতের রাতে মঞ্জুরুল ও তাদের ঘেরের মাছ লুট করে ডারিমের লোকজন। ওই মাছ চেয়ারম্যান, তার ভাই গদাইপুর মাছের সেটে বিক্রি করতে গেলে তার স্বামী শরবত মোল্লার সঙ্গে বচসা বাঁধে। এ নিয়ে হাতাহাতিও হয়।
একপর্যায়ে চেয়ারম্যান তার ভাই টগরকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এমন প্রচার দিয়ে তার পক্ষের লোকজনকে সংগঠিত করে স্বামী শরবত মোল্লাকে পুরতন কবরস্থানের পাশে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে ডালিম ও তার লোকজন। স্বামীকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে, তাকে প্রতিবেশি আরিফা, তুয়ারডাঙার সুবিমল বিশ্বাসসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়। ভাঙচুর করা হয় তাদেও বাড়িসহ পাঁচটি বাড়ি। গত শুক্রবার সকালে তার দু’ ছেলে সবুজ ও শিমুল তাকে ও স্বামীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও পরে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। গত শুক্রবার গভীর রাতে তার স্বামী মারা যান।
ময়না তদন্ত শেষে গত শনিবার বিকেল ৫টায় স্বামীর লাশ বাড়িতে আনা হয়। তার স্বামীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামের ক্ষুব্ধ মানুষজন ডালিম ও তার কয় সহযোগীদের বাড়ি ভাঙচুর করে বলে তিনি জেনেছেন। ছেলে সবজু বাবাকে হত্যার অভিযোগে শনিবার রাতেই মামলা করে ডালিমকে প্রধান আসামী করে। অথচ ডালিম চেয়ারম্যানের ভাই টগরের উপর হামলা ও চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় চেয়ারম্যানের ভাই ওবায়দুল্লাহ ডাবলু বাদি হয়ে থানায় পৃথক দু’টি মামলা করেছেন। মালা দু’টিতে তার ছেলে সবুজ, শিমুল ও কয়েকজন সাক্ষীকে অসামী করা হয়েছে।
অসামী করা হয়েছে ডালিমের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে দায়েরকৃত কয়েকটি মামলার বাদিকে। তার দু’ ছেলে ও স্বজনরা আসামী হওয়ায় গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে থাকায় তারা স্বামীর মিলাদে আসতে পারেনি।
অথচ গত ১১দিনেও পুলিশ তার স্বামী হত্যা মামলার প্রধান আসামী ডালিমকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গদাইপুর গ্রামের হাফিজুর মোল্লার স্ত্রী আরিফা খাতুন বলেন, শরবতকে রক্ষা করতে গেলে রড দিয়ে তার বাম পা ভেঙ্গে দিয়েছে ডালিম চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।
তিনি আরো জানান, চারটি মামলায় ১৩৮ জন আসামী হওয়ায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিনের বেলায় গদাইপুর গ্রাম পুরুষ শুন্য হয়ে যায়। চেয়ারম্যান ডালিমের ভাবী স্বপ্না খাতুন জানান, রুহুল কুদ্দুস ও রমজান বাহিনীর লোকজন তাদের উপর আবারো হামলা করতে পারেন এমন আশঙ্কায় তারা রাতে ঘুমোতে পারছেন না। খাজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল কুদ্দুস জানান, তিনি ঘটনাস্থলে না থাকার পরও ডালিমের ভাই ও জামিলা খাতুনের দায়েরকৃত মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে।
এব্যাপারে সোমবার বিকালে শাহানেওয়াজ ডালিমের মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, নতুন করে হামলা না হয় এবং নতুন কোন সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটে সেজন্য পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।