অনলাইন ডেস্ক:
আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বসানো অস্থায়ী আদালতের এজলাস কক্ষ। বুধবার (৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে নথি ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া, পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ বোরহানউদ্দিনসহ আদালত সংশ্লিষ্টদের অনেকেই। এসময় আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন। পরে জানানো হয়, সেখানে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচারকাজ আর ‘হচ্ছে না’। এমন তথ্য জানার পর সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচারকার্য পরিচালনার জন্য বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত ভবনটিকে অস্থায়ী আদালত বানিয়ে বিচার পরিচালিত হয়ে আসছে। ওই মামলার বিচারকাজ আবারও আজ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। এবারও সেখানেই অস্থায়ী আদালতে বিচারকাজ পরিচালনা করার কথা ছিল। তবে বিচারকাজ বন্ধ করে মাঠ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
রাতভর আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালেও সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা আলিয়া মাদ্রাসার আশপাশের সব সড়ক বন্ধ করে দেন। দাবি তোলেন, তাদের মাদ্রাসা মাঠ ফিরিয়ে দিতে হবে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর একটি দলও।
আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাদ্রাসার ভেতরে মাঠে বিচারকাজ চলমান থাকলে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। এর আগে বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরও কর্ণপাত করেনি তারা। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আজ সড়ক অবরোধ করেছে।
অবশেষে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলো আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অবশ্য গত রাতেই মন্ত্রণালয় থেকে এমন একটি আভাস দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আদালত ভবনটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের বাধার কারণে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আসামিদের নিয়ে যাওয়া-আসা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হচ্ছে। আর এই দুই কারণে বিচারকাজ বকশীবাজার থেকে কেরানীগঞ্জে নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আসামিদের কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হচ্ছে। তাই ওই কারাগারে নির্মিত অস্থায়ী আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করা গেলে আসামিদের আনা-নেওয়ার অসুবিধা দূর হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
এদিকে মাঠে বিচারকাজ পরিচালনা হচ্ছে না, এমন খবরের পর সড়কের অবরোধ তুলে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১২টার পর থেকে তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে দেখা যায়। এতে যান চলাচল আবারও শুরু হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে মধ্যরাতে অস্থায়ী এই আদালতের এজলাস কক্ষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময় মাদ্রাসার বাইরে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি অবস্থান করলেও প্রধান দুটি ফটক তালাবদ্ধ থাকার কারণে কোনও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। আগুনে কিছু নথি ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।