হোম এক্সক্লুসিভ আরিফুলের নির্যাতন থেকে সাংবাদিক সমাজকে শিক্ষা নেয়া উচিত

আরিফুলের নির্যাতন থেকে সাংবাদিক সমাজকে শিক্ষা নেয়া উচিত

কর্তৃক
০ মন্তব্য 145 ভিউজ

রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী :

মোবাইল কোর্টের এক কর্মকর্তা কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান কে কলমা পড়তে বললেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রিগ্যান আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকে। একটি ফোন আসলো মোবাইল কোট এর কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার কৃপায় জীবনটা রক্ষা হলো । এরপর ডিসি অফিসে নিয়ে নগ্ন করে অমানুষিক নির্যাতন। গভীর রাতে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা রিগ্যানের ভিডিও-চিত্রে কথাগুলো শুনতে-শুনতে একসময় ঘুম এসে গেল।

ঘুমের মধ্যে মাথায় চিন্তা ঢুকে গেল বঙ্গবন্ধু কি এই সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন ? প্রধানমন্ত্রী বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এর কথা বলে আসছেন। কিন্তু আমরা যারা মাঠ পর্যায়ের সংবাদকর্মী তারা কি এর প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি ? সাংবাদিক সমাজ ও তাদের সেই পেশাদারিত্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বিভিন্ন কারণের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা তেমন চোখে পড়ছে না।

তবে কেউ কেউ যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে সাহসী সাংবাদিকতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের সংখ্যা নগণ্য। সাংবাদিকদের একটি অংশ চাটুকারিতায় ব্যস্ত। কেউ কেউ এমপি মন্ত্রীর চাটুকারিতায় ব্যস্ত আছেন। আবার কেউ কেউ প্রশাসনের চাটুকারিতা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও ডিজিটাল আইনের কারণে ইচ্ছা থাকলেও আজ সাহসী সাংবাদিকরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ।

কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকেনা। আজকে যেটা গোপন -একদিন সেটা ফাঁস হয়ে যাবে। সরকারের প্রতিটি সেক্টরে যে লাগামহীন দুর্নীতি চলছে তা নিয়ন্ত্রণ করবে কে ? সরকারি দপ্তরে গেলে দেখা যায় আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত লেখা ছোট ছোট সাইনবোর্ড সরকারি ভবনের দেওয়ালে টানানো থাকে। এই লেখা দেখলেই হাসি পায়- বাস্তবতার সাথে ওই সাইনবোর্ড গুলোর লেখার সাথে কাজের কোন মিল নাই। আজকের যুগান্তর পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, সাতক্ষীরার ২টি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ৮০% সরকারি অর্থ লোপাট হয়েছে। এটাই হলো বাস্তবতা।

তবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এই পেশার একটি অংশ দুর্নীতি তে জড়িয়ে পড়েছেন- তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এর মধ্যেও কেউ কেউ সাহস নিয়ে সত্য কথাটি জনমানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । তাতেই যত বিপত্তি। যেমনটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুলের জীবনে। কাজল নামের একজন সাংবাদিক এখনো নিখোঁজ রয়েছে। মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

মন্ত্রী এমপি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মঞ্চে বসে সাংবাদিকদের উপদেশ দেন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য। কিন্তু সেই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা যদি ওই নেতা বা আমলার বিপক্ষে চলে যায় তখনই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়। তারা মঞ্চের গতানুগতিক বক্তব্য ভুলে গিয়ে সাংবাদিককে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটতে থাকেন।

শুরু হয় ষড়যন্ত্র। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের দুর্বলতা খুঁজতে থাকে কেউ কেউ। না পেলে ওই সাংবাদিকের পরিবারের কেউ অথবা আত্মীয় স্বজনের টার্গেট করা হয়।

তবে দুর্ভাগ্যজনক এই যে, কোন ঘটনা সাংবাদিকরা একটা পক্ষ নিয়ে ফেলে। এটাও ঠিক নয়। পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে গেলে অবশ্যই সততার চর্চা করতে হবে। দেশ ও সমাজের কাছে সাংবাদিকের দায়বদ্ধতা রয়েছে। যত বাধাই আসুক না কেন সত্যের সন্ধান থেকে সাংবাদিক সমাজ যদি পিছু হটতে বাধ্য হয় তাহলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

লেখার সময় বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে আরিফুলের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ও তার আকুতি।পরম করুণাময় শৃষ্টিকর্তা আরিফুলের জীবন রক্ষা করেছে । আর দেশের সাংবাদিক সমাজকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো সাহসী সাংবাদিকতা করতে গেলে পেশাদারীর অবশ্যম্ভাবী। পেশাদার সাংবাদিকদের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।

লেখক : সম্পাদক,দৈনিক সংকল্প

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন