শ্যামনগর প্রতিনিধি,
প্রকৃত যেন ছাড়তে চায়না উপকূলের হতদরিদ্র মানুষের। বছরের অধিকাংশ সময় সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের। যে কারণে নিঃস্ব হতে হয় উপকূলের মানুষের। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হয় উপকূলের মানুষের। সম্প্রতি বুলবুলের আঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতে বিশ্ব মহামারী করোনা তারই মধ্যে আমপানা। সুপার সাইক্লোন আমফান ঝড়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে উপকূলীয় অঞ্চল। ঝুঁকিপূর্ণ বাধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় নিঃস্ব মানবতায় জীবন যাপন করছে উপকূলের সকল মানুষ বাড়ি ঘর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বসবাস করতে হচ্ছে সরকারি সাইক্লোন শেল্টারে ও ভাসমান নৌকার উপরে এ যেন প্রকৃতির নির্মম ইতিহাস। সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপকূলের মানুষের শেষ সম্বল টুকু কেড়ে নিয়েছে বলে জানা যায়। সুপার সাইক্লোন আমফান ঈদের কিছুদিন পূর্বে হওয়ায়। ঈদের উৎসব থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে উপকূলীয় এক লাখ মানুষের। কি নির্মম ইতিহাসের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে উপকূলের মানুষের তাদের শুধু একটাই চাওয়া ত্রাণ চাইনা টেকসই বাঁধ চই। কিন্তু কে শুনছে তাদের এই কথা? সিডর হলো আইলা হলো, বুলবুল হলো, আমফান হয়ে গেল দেখা যাক টেকসই বাঁধ নির্মাণ হয় কিনা। ঘূর্ণিঝড় ফোনের কারণে উপকূলের এক-তৃতীয়াংশ দিনে দুইবার পানির নিচে থাকায়। ঈদের আনন্দ উৎসব থেকে নিজের সব পরিবার ও সন্তানদের নিয় অনাহারে পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, পদ্মপুকুর প্রতিনিয়ত জোয়ার ভাটার পানি ওঠানামা করাছে প্রতিটি পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। নষ্ট হয়ে গেছে বসবাস করার মতো ঘরবাড়ি এছাড়াও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালী গ্রামের আবুল বাশার (৬০) বলেন, শেষ সম্বল দুই হাজারের মতো ডিমওয়ালা মুরগি জোয়ারের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে যার কারণে পরিবারের মুখে ঈদের সময় ঈদ সামগ্রী তুলে দিতে না পারায় খুবই মর্মাহত। জীবনের সর্বপ্রথম রোজা রাখতে পারেনি ঈদের নামাজ পড়া থেকেও বঞ্চিত হতে হচ্ছি।
ছোট শিশু আরিফ (১০) হোসেন জানান, অনেকেই আমরা ডুবে গেছি তাই ত্রাণ নিয়ে আসতেছে কিন্তু ঈদের পোশাক তো কেউ নিয়ে আসো না আমরা কিভাবে ঈদের নামাজ পড়বো মসজিদের মাঠ সবই তো ডুবে গেছে।
গাবুরা ইউনিয়নের মাসুরা খাতুন (৪০) জানান, আম ফানের কারণে বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে আছে। তিন চার দিন পার হলেও বাধ দেয়া হয়নি। জীবনের প্রথম বারের মত ছেলে মেয়েদের ঈদের নতুন পোশাক কিনে দিতে না পারায় খুবই খারাপ লাগছে।
বৃদ্ধা আব্দুল করিম বলেন, সুপার সাইক্লোন আম ফান ঝড়ের কারণে শেষ বয়সে ঈদের নামাজ পড়তে পারবো না এটাই আমাদের দেখার ছিল।
ছোটবেলা থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আসছে এরকম অবস্থায় আমাদের কখনো পড়তে হয়নি এসব কপালের দোষ।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, গাবুরা ৪৩ হাজার মানুষ ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত । ঘূর্ণিঝড় আমাফানের কারণে পুরো এলাকা প্লাবিত হওয়ায় প্রথমবারের মতো ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নের মানুষ।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, ইউনিয়নের ৩৭ হাজার মানুষ বসবাস করে ঘূর্ণিঝড় আমফানে বাঁধ ভেঙে ও করোনা কারণে
এবার ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পদ্মপুকুরের মানুষ।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের বাঁধ ভেঙে নয়টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এবার ঈদ আনন্দ হতে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের ঈদ আনন্দ হচ্ছে বাঁধ সংস্কার করে পানি ভিতরে প্রবেশ না করতে দেওয়া। এটাই তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ঈদ আনন্দ হবে বলে আমি মনে করি।
উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের রক্ষা করতে হলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করাটা জরুরি বলে মনে করেন সুধীমহল সহ সাধারন মানুষ।