আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
আফগানিস্তানে দিন দিন প্রকট হচ্ছে মানবিক সংকট। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মানুষের হাতে অর্থ না থাকা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এমন করুণ পরিস্থিতিতেও যুক্তরাষ্ট্র আফগানদের অর্থ ফিরিয়ে দেবে না বলে আবারও সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
তবে জি২০ নেতারা দেশটিতে মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে রাজি নন তারা। জি২০ হলো বিশ্বের ২০টি দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট বা গ্রুপ।
২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, এই গ্রুপের ২০ জন সদস্য হলো আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্পেন এই জোটের স্থায়ী আমন্ত্রিত অতিথি।
চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে আফগানিস্তান। মানুষের হাতে অর্থ নেই। যারা কাজ করছেন তারা পাচ্ছেন না বেতন। কেনাকাটা করতে পারছেন না প্রয়োজনীয় কোনো কিছুই। বাজারে মানুষ নেই তাই। সব মিলিয়ে বেগতিক দশা।
এমন সংকটময় অবস্থার মধ্যেই জি২০ নেতারা জরুরি ভিত্তিতে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। সেখানে উঠে এসেছে মানবিক সংকট কীভাবে দূর করা যায় সে বিষয়টি। ইতালির আয়োজনে সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন জাতিসংঘ মহাসচিব, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, কানাডার প্রধানমন্ত্রীসহ জি২০ জোটভুক্ত ইউরোপিয়ান দেশগুলোর নেতারা।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি বলেন, আফগান নাগরিকদের সাহায্য করা সহজ নয়। আফগানিস্তান অনেক বড় দেশ। এ জন্য চাই নিয়ন্ত্রক তালেবানের সাহায্য। কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায় কেন তালেবানের সঙ্গে কাজ করবে? তাদের স্বীকৃতিই দেয়া হয়নি।
এমন করুণ অবস্থার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফের জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানের আটকে রাখা অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না। তবে ঘোষণা করা হয়েছে ছয় কোটি ৪০ লাখ ডলার সহায়তার।
আর জাতিসংঘ চটেছে, আফগান নারী ও মেয়ে শিশুদের দেয়া প্রতিশ্রুতি তালেবান ভেঙেছে বলে। তালেবানকে স্বীকৃতি পেতে হলে কথা রাখতে হবে বলেও জানায় সংস্থাটি। আর দেশটিতে মৌলবাদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, তা ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এদিকে আফগানবাসীর জন্য ১২০ কোটি ইউরো (সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা) অর্থসাহায্য ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) এই ঘোষণা করে বলেন, আফগানিস্তানকে মানবিক ও আর্থ-সামাজিক বিপর্যয় থেকে বাঁচাতেই এই পদক্ষেপ।
উরসুলা জানিয়েছেন, এই ১২০ কোটি ইউরোর মধ্যে ২৫ কোটি (দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি) দেওয়া হবে আফগানিস্তানের কয়েকটি প্রতিবেশী দেশকে, যারা ঘরছাড়া আফগানদের আশ্রয় দিয়েছে।
তালেবানের ক্ষমতা দখলের পরে আন্তর্জাতিক অনুদান কার্যত বন্ধ হয়ে যায় আফগানিস্তানে। তার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গরিব এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর।
চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘে একটি পরিসংখ্যান জানিয়েছিল, আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা আন্তর্জাতিক অর্থসাহায্যের ওপরে নির্ভরশীল। সংখ্যার হিসেবে প্রায় দুই লাখ।
সেপ্টেম্বরে জেনেভায় জাতিসংঘের বৈঠকে জানানো হয়, আফগানিস্তানের মানবিক বিপর্যয় সামলাতে অন্তত ৬০ কোটি ডলার (সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা) আপদকালীন অর্থসাহায্য প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনি গুতেরেস সদস্য দেশগুলোর কাছে আফগান-অনুদানের আবেদন জানিয়ে বলেন, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) কর্মসূচি বাস্তবায়নে ওই অর্থ ব্যবহৃত হবে।