জাতীয় ডেস্ক:
ভারতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের খবরে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে গোটা কালীগঞ্জবাসী। তার লাশ উদ্ধার না হওয়াতে মৃত্যু নিয়ে এখনও ধোয়াশা কাটেনি। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার (২৩ মে) এমপির শহরের বাসভবন ও পাশেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে সহস্রাধিক মানুষের ভিড় জমে।
এদিকে, তার মৃত্যুর খবরে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বেলা ১২টার পর ভূষণ রোডের দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা, দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় পতাকা উত্তোলনকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ।
পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন, মতিয়ার রহমান মতি, ওহিদুজ্জামান ওদু ও মোস্তাফিজুর রহমান বিজুসহ স্থানীয় নেতারা। তারা কালো ব্যাচ ধারণসহ শুক্রবার (২৪ মে) জুম্মাবাদ মসজিদে দোয়া মাহফিল করবেন বলেও ঘোষণা দেন। নেতারা বলেন, আনারকে যারা হত্যা করেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। আমরা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানায় দ্রুত আমাদের এমপির মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করবেন। এমপি আনার আওয়ামী লীগের মনোনীত টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দলীয়ভাবে আগামী শনিবার (২৫ মে) সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সভা আহ্বায়ন করে আরও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন বলেও জানান নেতারা।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ আবু আজিফ বলেন, ‘এমপি আনারের নিখোঁজ নিয়ে তার সেজো ভাই এনামুল হক ইমান গত ১৯ মে কালীগঞ্জ থানায় একটি ডিডি করেছেন। বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন মহলে অবহিত করেছি। এমপি আনারের বিষয়টি তাদের সরকারের উর্ধ্বতন সংস্থাগুলি পর্যবেক্ষণ করছেন’
১২ মে দর্শনার গেদে বর্ডার দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। পরের দিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ মে বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ করে জানান তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। ১৬ মে এমপির ব্যক্তিগত গাড়ি চালক তরিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনেও একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানান দিল্লি যাওয়ার কথা। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান আনোয়ারুল আজিম আনার।
এরপর থকে পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাকে ফোনে বা কোনো মাধ্যমে না পেয়ে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানায় উদ্বিগ্ন এমপি পরিবার। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে থানায় একটি মিসিং ডাইরি করেন এমপির পরিচিত ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস। ১৯ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানাতেও তার সেজা ভাই একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন।
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা ৩ বার আওয়াামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৯৩ সালে পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমপি হবার পর দীর্ঘ গেল ১০ বছরে তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। সাংসদ হিসাবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম রয়েছে।