গত সপ্তাহ থেকেই মুরগি ও ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দামও বাড়লো। এই দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। দাম বাড়ার কারণে সীমিত আয়ের মানুষ এখন বাজার করছেন অনেক হিসাব করে। এছাড়া, বাজারে আমিষজাতীয় পণ্যের কেনাবেচা অনেকাংশে কমে গেছে।
আজ শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজার, মুগদা, যাত্রাবাড়ি, শনিরআখড়া, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র। বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে বেশকিছু পণ্যের দাম। এরমধ্যে অন্যতম ছিল ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও মাছ।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, চাষের পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ও শিং মাছের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ-চিংড়ি এবং দেশি মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। আর এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা দরে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে এ মাছ বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে।
এদিকে প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হতো ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজি ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। দেশি টেংরা, শিং ও বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০০-৬৫০ টাকার মধ্যে।
মাংসের বাজার
বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি এখন ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির কেজি চাওয়া হচ্ছে ৪৫০-৫২০ টাকা। গরুর মাংসও কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে এখন ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায় উঠেছে। আর খাসির মাংসের দাম ছিল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। অন্যদিকে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজার
কাঁচা সবজির বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, নতুন আলু কেজি ৩০ টাকা, শিমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটোর কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজরের কেজি ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকা, বাঁধা কপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, বেগুনের কেজি ৫০ টাকা, শসার কেজি ৫০ টাকা, ব্রোকলি প্রতি কেজি ৩০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ টাকা, ঝিঙ্গার কেজি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ১৬০ টাকা এবং খিরাইয়ের কেজি ৪০ টাকা।
কাওরানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সাত্তার খান বলেন, বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম হঠাৎ করে সপ্তাহ ব্যবধানে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে গেছে। বাজারে মুরগির সরবরাহ একটু কম। দামের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে বেচাকেনা কমে এসেছে।
রফিক উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে বাজেট করে আসি এক, আর এসে দেখি আরেক। অফরুন্ত টাকা না থাকলে এই বাজারে বাজার করা কঠিন। আমিষে বাজারে যেতেই ভয় করছে। যে হারে দাম রকেটের মত বাড়ছে, কত গিয়ে ঠেকে জানি না। এইভাবে দাম বাড়তে থাকলে এগুলো বিলাসিতার খাবার হবে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের আর আমিষ খাওয়া হবে না।
সালাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ’প্রথম প্রথম পাকিন্তানি মুরগির মাংস খেতাম। কিন্তু ওই মুরগির দাম বাড়ার কারণে ব্রয়লার খাওয়া শুরু করি। এখন বয়লার মুরগির দামও ২০০ টাকা পার হয়ে গিয়েছে। বেতন এক ফোটা বাড়েনি, কিন্তু বাজারে আসলে বাজেট অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারি না।