হোম রাজনীতি অর্থের উৎস নিয়ে ছাত্রদল-শিবিরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, সংগঠনগুলোর আয়ের উৎস কোথায়?

অর্থের উৎস নিয়ে ছাত্রদল-শিবিরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, সংগঠনগুলোর আয়ের উৎস কোথায়?

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 14 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
সর্বশেষ গত সপ্তাহে ছাত্র শিবির ও ছাত্রদের নতুন দলের আয়ের উৎস নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। আবার ছাত্রদলের এরকম অভিযোগকে ‘অপরিপক্ব’ বলে আখ্যা দিয়েছে ছাত্র শিবির।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে যেভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ ছিল, পাঁচই অগাস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে, চেহারা বা ব্যানার পাল্টালেও চাঁদাবাজির চিত্র পাল্টায়নি। সেই দায় থেকে বাঁচতে অভিযোগ আর আর কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি চলছে।

ছাত্রদলের আয়ের উৎস কী?

সেই সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি, তদবির, সন্ত্রাস, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের মতো নানা অভিযোগ ছিল। ইতোমধ্যেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এরপরই গত কয়েকমাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা চাওয়ার মতো অভিযোগও পাওয়া যায়।

গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে বা এনসিপিকে কারা অর্থ দিচ্ছেন এবং ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিদিন তিন লাখ টাকার ইফতার আয়োজনের অর্থ কোথায় পায়, সেই প্রশ্ন করেছে ছাত্রদল।

ছাত্রদল বলছে, তারা এই মুহূর্তে আর্থিক সংকটে বড় বাজেটের কোন খরচ করতে পারছে না। যে কারণে তারা খুব স্বল্প পরিসরে ছোটখাটো আয়োজন করছে।

যদিও আহতের চিকিৎসার ব্যয় সরকারের পক্ষ থেকে বহন করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে ছাত্রদল বলছে, মূল খরচটা দলের পক্ষ থেকেই করা হচ্ছে। আর এই বরাদ্দ আসছে দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গঠিত ‘বিএনপি পরিবার’ নামের একটি সংগঠন থেকে।

এই অর্থ বরাদ্দ কোথা থেকে আসছে জানতে চাইলে ছাত্রদল সভাপতি মি. ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সাবেক নেতৃবৃন্দ ও আমরা ব্যক্তিগতভাবে খরচ করি। সাবেক নেতৃবৃন্দ যারা প্রোগ্রাম কেন্দ্রিক কন্ট্রিবিউশন করেন। মাসিক ভাবে কেউ দেয় না। কোন কর্মসূচি হলে সাবেকরা বহন করে।”

যদিও বিবিসিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে চাঁদাবাজির পরিস্থিতি বদলায়নি। ক্ষমতার পালাবদলে পুরোনো মুখের জায়গায় নতুন মুখ এসেছে, কিন্তু চাঁদাবাজির চিত্র একই রয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগের জায়গায় বেশিরভাগ স্থানে বিএনপির স্থানীয় সংগঠন, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে নতুন করে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে গত এক যুগেরও বেশি সময় প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি ছাত্র শিবির।

সাম্প্রতিক এই ছাত্র সংগঠনটিকে ঢাকায় সম্মেলনসহ বড় বড় কিছু কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।

গত শুক্রবার এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শিবিরের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

এই ৯০ লাখ টাকা একটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন হিসেবে কীভাবে উপার্জন করছে, কিংবা শিবিরের অর্থের উৎস কী তা জানতে চায় ছাত্রদল।

মি. সাদ্দাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ছাত্রদল ধারণা নিয়ে বলেছে। আমরা বলেছি একদিনে তিন লাখ খরচ হয়েছে। আমরা যদি ৩০ দিন দেই তাহলে ৯০ লাখ টাকা খরচ হবে সেটা ধারণা। কিন্তু আমরা ৩০ দিনের ইফতার আদতে দিবো কি না সেটা তো, তারা জানেই না। তারা যা বলেছে কল্পনা করে বলেছে”।

জবাবে মি. সাদ্দাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ”আমাদের সকল সদস্যদের সংগঠনে দান করতে হয়। ইচ্ছা করেই তারা দেয়। আমাদের প্রাক্তনরা প্রতিমাসে নিয়মিত ‘এয়ানত'(দান) করে। এর বাইরেও আমাদের প্রকাশনা সামগ্রীর বিক্রির মুনাফা থেকে সংগঠন উপকৃত হয়।

বিশাল অনুষ্ঠানে অর্থ কোথায় পায় এনসিপি?

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নতুন একটি সংগঠনের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান ও এর খরচ নিয়ে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়।

তাহলে কারা এই অর্থ বরাদ্দ করছে যাদের নাম প্রকাশে দলটির আপত্তি রয়েছে?

গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ একই আদর্শে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নামে নতুন একটি ছাত্র সংগঠন চালু করেছে গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে।

এই ছাত্র সংগঠনটির আয়ের উৎস জানতে চাওয়া হলে সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি স্বচ্ছতা বজায় রাখার। আমরা তেমন কোন খরচও করি না। ইফতার যারা করেছি সবার নিজের টাকা দিয়ে করছি”।

যদিও এর মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কোনো নেতা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এই প্লাটফর্মের রংপুরের এক নেতার এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।

‘ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে, চাঁদাবাজি সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়নি’

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতির ধারা অনুসরণ করছে তাদের ছাত্র সংগঠনগুলো। যে কারণে গণ অভ্যুত্থানের পরও এই ক্ষেত্রে তেমন কোন পরির্বতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

তার দাবি, এমন অবস্থায় পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর মতো নতুন রাজনৈতিক দল বা তাদের আদর্শিক ছাত্র সংগঠনও একই পথ অনুসরণ করছে।

এভাবে চললে বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতিতে কতখানি পরিবর্তন সম্ভব সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই বিশ্লেষক।

এক্ষেত্রে রাজনীতিতে ইতিবাচক পরির্বতন আনতে আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা আনারও পরামর্শ দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন