হোম অর্থ ও বাণিজ্য অভিযান আতঙ্কে রেস্তোরাঁয় রেস্তোরাঁয় তালা

অভিযান আতঙ্কে রেস্তোরাঁয় রেস্তোরাঁয় তালা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 92 ভিউজ

বাণিজ্য ডেস্ক:

বেইলি রোড ট্রাজেডির পর রাজধানীতে অভিযানে নেমেছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। রেস্তোরাঁগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে চলছে তোড়জোড়। এরই মধ্যে কয়েক ডজন রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁর ম্যানেজারসহ বেশ কয়েকজনকে আটকও করেছে প্রশাসন। আর এই অভিযান আতঙ্কে অধিকাংশ মালিক বন্ধ রেখেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এমনকি ঢেকে রেখেছেন দোকানের নামও। তবে রেস্তোরাঁ মালিকদের দাবি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।

অন্যদিকে যে রেস্তোরাঁগুলো খোলা রয়েছে সেগুলোতেও ভোক্তার সংখ্যা কমে গেছে। কোনো কোনো রেস্তোরাঁয় বেচাবিক্রি নেমেছে অর্ধেকে। আবার যারা খেতে আসছেন, তারাও নিরাপত্তা উদ্বেগে নানা প্রশ্ন করছেন রেস্তোরাঁ মালিকদের।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও কলাবাগান এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রেস্তোরাঁগুলোতে চিরচেনা ভিড় নেই। অনেকটাই ক্রেতাশূন্য অবস্থায় খোলা রয়েছে কেএফসি, বিএফসি, চিলক্সের মতো নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁর বেশিরভাগেরই শাটার নামানো।

তেমনই একটি সুপরিচিত রেস্তোরাঁ ধানমন্ডির শংকরের ওজ ক্যাফে। শাটার নামিয়ে কর্মচারীরা কিছুটা অচেনা ভঙ্গিতে ঘোরাফেরা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মী জানান, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলায় রেস্টুরেন্ট বন্ধের খবর ফেসবুক পেজে কাস্টমারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যেই রেস্টুরেন্ট আবারও চালু হবে।

রক্ষণাবেক্ষণের অজুহাত দিয়ে অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছে ধানমন্ডির শংকরের ওজ ক্যাফে। ছবি: সময় সংবাদ

বন্ধ করে রাখা কয়েকটি রেস্তোরাঁর মালিকের সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের। তারা জানান, আতঙ্কের মধ্যে ব্যবসা করছেন তারা। প্রশাসন কী কারণে এরকম করছে, বুঝতে পারছেন না তারা। কয়েকদিন আগে যে রেস্তোরাঁয় বিক্রি হতো ১ থেকে ২ লাখ টাকা, সেটি কমে এখন দিনে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সব কাগজপত্র থাকার পরও, গ্রেফতার ও জরিমানার ভয়ে এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছেন না তারা।

ভোক্তারা বলছেন, বেইলি রোডের ঘটনার পর আতঙ্ক নিয়ে খেতে আসছেন তারা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে না জেনে রেস্তোরাঁয় বসতে ভয় পাচ্ছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। বেশকিছু রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, রাস্তার পাশের ছোট ফাস্টফুডের দোকানেই উদরপুর্তি করতে আসছেন ভোজনরসিকেরা।

মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকায় খেতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদ সিফাত আশরাবী বলেন, বউ-বাচ্চা নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে শঙ্কাবোধ করায় রাস্তার পাশে খোলা দোকানেই খেতে চলে আসলাম। এখানকার খাবারেও কিন্তু স্বাদ কম নয়।

এদিকে রেস্তোরাঁয় প্রসাশনের অভিযানকে ‘তাণ্ডব’ বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। মঙ্গলবার সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর থেকে ৪২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়াসহ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে কয়েকটি। দেশের রেস্তোরাঁ খাতকে ধ্বংস করতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে।

গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের দায় কেউ এড়াতে পারে না উল্লেখ করে ইমরান হাসান বলেন, এ ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানির পর রাজউক ও সিভিল ডিফেন্সের টনক নড়েছে। ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকা শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে গ্যাসের সিলিন্ডার জব্দ করছে এবং স্টাফদের গ্রেফতার করছে। এটি সমস্যার সমাধান নয়। একাধিক সংস্থা থেকে অভিযান না চালিয়ে, নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে একটি কার্যকরী টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

ধানমন্ডির পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত খিলগাঁও এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিযান চালিয়েছে। মঙ্গলবার সেই দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

কতদিন এ অভিযান চলবে- প্রশ্ন করা হলে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের যেহেতু ভ্রাম্যমান আদালত নেই, আমরা সে কারণে সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেছি। সিটি করপোরেশন সহায়তা করায় আমরা এটি করতে পারছি। আজ খিলগাঁও এলাকার একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নোটিশ টানানো হয়েছে। এ কার্যক্রমটি চলমান রাখতে প্রতিটি জেলার ডিসিদেরকেও অনুরোধ করা হবে।’

একাধিকবার নোটিশ দেবার পরও যারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ফায়ার সার্ভিস মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন