হোম খুলনাবাগেরহাট অবৈধ উপায়ে শিক্ষক পদায়ন,ক্লাস না করে বেতন তুলছেন কলেজের ১৪ শিক্ষক!

অবৈধ উপায়ে শিক্ষক পদায়ন,ক্লাস না করে বেতন তুলছেন কলেজের ১৪ শিক্ষক!

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 15 ভিউজ

জসিম উদ্দিন, বাগেরহাট:

জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে অনার্স ক্লাসের অনুমোদন নেয়া হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে কেবল ইন্টার থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ক্লাসের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জনবল কাঠামো শিক্ষক ও কর্মচারী পদায় করা হয়েছে অর্নাস ক্লাস পর্যন্ত। তাই ক্লাস ও ছাত্র কোনটি না থাকায় কেবল হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে ৪ বছর ধরে ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে বেতন তুলছেন মোংলা বঙ্গবন্ধু সরকারী মহিলা কলেজের ১৪ শিক্ষক। বর্হিভূতভাবে এই কলেজের অনিয়ম কে নিয়মে পরিনত করতে মোংলা মহিলা কলেজ এর স্থলে বঙ্গবন্ধুর নাম জুড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ নাম করণ করা হয়। এর পর করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো অর্থিক সুবিধা দিয়ে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সকল অবৈধ কলেজের অনুমোদন ও শিক্ষক পদায়ন করা হয়।। এক্ষেত্রে অমান্য করা হয় শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি,র অডিট রিপোট। এসব স্বীকার করেন কলেজটির অধ্যক্ষ মোঃ হাফিজুর রহমান।

ঘুষ দিয়ে টাক্সর্ফোসের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে নিয়োগ পাওয়া অনার্স ক্লাসের শিক্ষকরা হলেন-মল্লিক শামছুজ্জোহা, সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, আব্দুল জলিল সানা, অনুপমা মন্ডল, মোঃ আল আমিন, দেলোয়ার হোসেন, মোঃ রুহুল কুদ্দুস, তামান্না জাহান, শেখ ফরিদ, আব্দুল্লা আল মামুন, জোবায়দা গুলশানারা, মাহামুদুল হাসান, আব্দুর রহিম ও সাদেকুর নাহার। তারা সবাই ১৪ লাখ টাকা করে ঘুষ দেন সংশ্লিষ্ট শাখায়। যাতে করে অনার্সের শিক্ষক হয়ে ক্লাস না করে বেতন তুলে পকেটে ভরা যায়। এভাবে ২০২১ সাল থেকে কাগজে কলমে শিক্ষক বনে যাওয়া তারা সবাই বেতন উঠিয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ক্লাস না নিয়ে দীর্ঘদিন বেতন তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে, মোংলা বঙ্গবন্ধু মহিলা সরকারি কলেজের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এর উত্তর শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও ডিজি দিবেন’।

এই কলেজ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে ‘মোংলা মহিলা কলেজে’ নাম করন করে শুরু হয় কলেজটির কার্যক্রম।যার বর্তমান নাম ‘বঙ্গবন্ধ সরকারী মহিলা সরকারি কলেজে। অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা কৌশলে এর নাম পরিবর্তন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার এবং বিশেষ সুবিধা দিয়ে ডিজি ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অডিট রিপোর্টে অনার্স ক্লাস না থাকার বিষয়টিকে এড়িয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় কর্তৃক বিশেষ ট্যাক্সফোর্সের মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়। এর পর কেবল ইন্টারমিডিয়েট থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ক্লাসের অনুমোদন থাকা কলেজে অনার্স পর্যন্ত বেতন চালু করে দেয় অর্থ মন্ত্রনালয়। এরপর ক্লাস না করে কেবল খাতায় স্বাক্ষর করে ২০২১ সালের মে মাস থেকে অন্য শিক্ষকদের সাথে বেতন তুলছেন অনার্স ক্লাসের জন্য নিয়োগ পাওয়া এই ১৪ জন শিক্ষক।

ঘুষ দিয়ে অনার্সের শিক্ষক পদায়ন ও বেতন পাওয়ার বিষয়ে অকপটে স্বীকার করে, কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান জটিল পরিস্থিীতির জন্য দায়ী টাক্সর্ফোস । কারন তারা অডিট রিপোট অমান্য করে শিক্ষক অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু অর্নাস ক্লাসের অনুমোদন পাওয়া যায়নি।

তবে নিজেদের কাধেঁ দোষ নিতে নারাজ তৎকালিন জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় কতৃক গঠিত টাক্সর্ফোসের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি। তিনি বলেন, তারা কেবল শিক্ষক পদায়ন করেছেন। বেতন চালু করেছেন অর্থ মন্ত্রনালয়।

বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও মোংলা সরকারী কলেজের সাবেক গর্ভানিং বডির সদস্য মোঃ শামছুর রহমান বলেন,প্রতিটি কলেজে ক্যাটাগরি অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়। যদি ইন্টার মেডিয়েট কলেজ হয় প্রতি বিষয়ে একজন শিক্ষক,আর ডিগ্রি হলে সাথে আরো দুইজন করে যুক্ত হবে। আর যদি অর্নাস হয় প্রতি বিষয়ে আরো চারজন যুক্ত হবে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে বিষয় অনুমোদন নিতে হবে। এর পর বিষয় অনুযায়ী নিয়োগ বিঞ্জপ্তি দিয়ে ইন্টারভিউ করে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। তার পর ছাত্র ভর্তি করে নিয়মিত ক্লাস করিয়ে পরিক্ষা শেষে ফলাফলের উপর ভিত্তি করে শিক্ষকের বেতন চালু হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোন নিয়ম মানা হয়নি। তাই অনিয়মের সাথে যদি জড়িত কলেজ সভাপতি-অধ্যক্ষ এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং টাকফোর্সের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা উচিত। একই সাথে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ১৪ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল পূর্বক বেতন বাবত উত্তোলন করা সব টাকা সরকারী কোষাগারে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করছি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন