বিনোদন ডেস্ক:
বলিউড সিনেমা ‘পিপ্পা’-য় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। কবির ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’-র বিকৃত গানটি অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সরাতে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে। ১০ আইনজীবী ও একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ নোটিশ দেয়া হয়।
রোববার( ১৯ নভেম্বর) ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির ডাক ও ই-মেইল যোগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এ আইনি নোটিশ পাঠান।
নোটিশে দাবি করা হয়, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটি বিকৃত করা হয়েছে।
১০ আইনজীবীর মধ্যে রয়েছেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার, ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদি জামান, ব্যারিস্টার শেখ মঈসুল করিম, ব্যারিস্টার আহমেদ ফারজাদ, অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট আনাস মিয়া ও অ্যাডভোকেট মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান।
এ ১০ আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নোটিশটি পাঠানো হয়।
আইনি নোটিশে মূল সুরের গানটিকে অক্ষুন্ন রাখারও দাবি জানানো হয়। নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, এমাজন প্রাইম, ওটিটি, ওয়েবসাইট থেকে এ আর রহমানের বিকৃত ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটি অপসারণ করারও দাবি জানানো হয়েছে।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটির মূল লেখক ও সুরকার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ কালজয়ী এ গানটির নতুনভাবে সুরারোপ করে বিকৃত করেছেন ভারতীয় সংগীত পরিচালক এ আর রহমান। অথচ কবির মূল সুরের গানটি সব বিপ্লব–বিদ্রোহ তথা আন্দোলন–সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। অন্যদিকে এ আর রহমানের নতুন সুর করা গান সে কালজয়ী গানটির জনপ্রিয়তা ক্ষুন্ন করেছে।
শত বছরের এ অবিনাশী ও অমর গান সময়ের প্রয়োজনে লেখা হলেও গানটির লোকপ্রিয়তায় সামান্য ঘাটতি হয়নি। ব্রিটিশবিরোধী মানসে লেখা গানটি সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার, ফলে এখনো সমানভাবে এটি প্রাসঙ্গিক।
তাই নোটিশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, একই গান একটি কাজী নজরুলের সুরে ও আরেকটি বিকৃত সুরে থাকলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবে। নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গানটি অপসারণ করা না হলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে নির্দেশনা চাওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আটকের প্রতিবাদে কাজী নজরুল ইসলাম ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটি লেখেন। ১৯২৪ সালে এ গানটি ‘ভাঙার গান’ বইয়ে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরপর ১৯২৪ সালের ১১ নভেম্বর ব্রিটিশ সরকার ‘ভাঙার গান’ নিষিদ্ধ করেন। পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতে ‘ভাঙার গান’ কবিতাটি ফের প্রকাশিত হয়। ১৯৪৯ সালে কলাম্বিয়া রেকর্ড এবং ১৯৫০ সালে এইচএমভিতে গিরিন চক্রবর্তীর কণ্ঠে গানটি বাণীবদ্ধ হয়।
১৯৪৯ সালে নির্মল চৌধুরী পরিচালিত ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ সিনেমায় গিরিন চক্রবর্তী ও তার সহশিল্পীদের নিয়ে গানটি রেকর্ড করেন সংগীত পরিচালক কালীপদ সেন। এরপর ১৯৬৯-৭০ সালে জহির রায়হান তার কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায়ও নজরুলের ঐতিহাসিক গানটি কোনোরকম পরিবর্তন না করেই ব্যবহার করেন। কিন্তু সে রীতি ভেঙে বলিউড সিনেমায় নিজের নতুন সুর প্রয়োগ করে নজরুলের গানটি ব্যবহার করেন এ আর রহমান।