খুলনা অফিস :
খুলনায় ১৪টি পরিবারের ১০টাকা কেজির চাল ৪বছর ধরে আত্মসাৎ করে খাচ্ছে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার রূপসার শ্রীফলতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার মিজানুর রহমান। এ বিষয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছে রূপসা উপজেলা প্রশাসন। অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে উধ্বর্তন কতৃর্পক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।এ নিয়ে উপজেলাব্যাপী ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
রূপসা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রূপসা উপজেলায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের নন্দনপুর এলাকার প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ১০ টাকা মূল্যে বিতরণ করা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশীপ নেয় সরদার মিজানুর রহমান।সে এলাকার একজন প্রভাবশালী এবং উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় সহজে এ ডিলারশীপ পেয়ে যান।
সরকার প্রতি বছর দেশের নিন্মআয়ের মানুষের জন্য খাদবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ভূর্তকি মূল্যে মাত্র ১০টাকা কেজি দরে চাল সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে ডিলার সরদার মিজানুর রহমান এলাকার ১৪টি পরিবারে চাল তাদেরকে না দিয়ে নিয়মিত আত্মসাৎ করে আসছেন। সরকারের বরাদ্ধের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চাল না পাওয়া ওই ১৪ ব্যক্তিরা হলেন-উপজেলার নন্দনপুর গ্রামের শাহিদ শেখ, সেলিম শেখ, আনিচুর রহমান, সাইদুর রহমান, খালেদা বেগম, জাহিদ মুন্সি, মুকুল শেখ, কামাল শেখ, রফিকুল শেখ, মমতাজ, নাসিম হাওলাদার, ওলিয়র হাসান, আসলাম খাঁ ও ফারুক হাওলাদার। তালিকাভুক্ত এসব পরিবারের সদস্যরা নিজেদের নাম তালিকাভুক্তি ও বরাদ্ধের কথাও জানেন না।
বঞ্চিত এসব পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৬ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রান ও সহায়তা দেয়ার কথা বলে স্থানীয়ভাবে চেয়ারমান-মেম্বররা তাদের নাম, ছবি ও ন্যাশনাল আইডিকার্ড নিয়েছিল। কিন্তু তাদের নামে কার্ড হয়েছে কিনা তা গত চার বছরেও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। কখনো খোজ-খবরও নেননি। সে কারনে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তারা কখনো ১০ টাকা মূল্যের এই চাল উত্তোলন করেননি। কে কিভাবে চাল উত্তোলন করেছে তারা সে বিষয়েও কিছু বলতে পারবেন না।
সম্প্রতি এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে পারেন রূপসা উপজেলা প্রশাসন। পরে ২২মে বুধবার রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আকতার,থানা অফিসার ইনচার্জ মোল্লা জাকির হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি টিম শ্রীফলতলা ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়টি তদন্ত করতে যায়।সেখানে ডিলার সরদার মিজানুর রহমান ও ভুক্তভোগী ১৪টি পরিবারের সদস্যেদের সাথে পৃথকভাবে কথা বলে চাল আত্নসাত্ব করার সত্যতা পান কর্মকর্তারা।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর শ্রীফলতলা ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়টির সরেজমিন তদন্ত করতে যাই। এ সময় আমার সঙ্গে রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছিলেন। সেখানে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ২০১৬ সাল থেকে তাদের এ চাল দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি তারা জানোও না যে তাদের নামে কার্ড আছে। সুতারাং তদন্তে ডিলার সরদার মিজানুর রহমান যে তাদের চাল আত্মসাৎ করেছেন তার সত্যতা মিলেছে। তবে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন উধ্বর্তন কতৃর্পক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে। সরকারের দেওয়া সুবিধা বঞ্চিত ওই ১৪ ব্যক্তির এ যাবৎকালের ক্ষতিপূরণ আদায়সহ ডিলারের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তার ডিলারশিপও বাতিল করা হবে বলেও জানান ইউএনও নাসরিন আক্তার। তবে দীর্ঘ চার বছর ধরে ১০টাকা কেজির চাল তালিকাভুক্ত পরিবারকে না দিয়ে আত্নসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার সরদার মিজানুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
পূর্ববর্তী পোস্ট