জাতীয় ডেস্ক :
চট্টগ্রামের হালদা নদীতে মৃত অবস্থায় একটি ডলফিন ভাসতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার দক্ষিণ গহিরা ওয়ার্ডের খালে মৃত ডলফিনটি ভেসে থাকতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিচার্স ল্যাবরেটরির কর্মকর্তাদের নির্দেশে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা ঘটনাস্থলে যান। তবে ডলফিনটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, মৃত ডলফিনটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৮ ফুট থেকে ৯ ফুটের মতো। ওজন প্রায় ১২০ কেজি। সেটি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ জন্য ডলফিনটি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এ নিয়ে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত হালদা নদী ও শাখা খাল মিলিয়ে ৩৬টি মৃত ডলফিন পাওয়া গেছে বলে জানান মনজুরুল কিবরিয়া।
গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিনের বিচরণ আছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে। ২০১৭ সাল থেকে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর ডলফিন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন গবেষকরা। তখন থেকে হালদা ও কর্ণফুলীতে মৃত ডলফিনের সংখ্যা গণনা শুরু হয়।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয়রমাসে হালদা নদীতে ১৮টি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালে ১০টি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। ২০২১ সালে মোট ৫টি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। চলতি বছর এ নিয়ে হালদায় তিনটি মৃত ডলফিন পাওয়া গেল।
কেন এত ডলফিন মারা যাচ্ছে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান জানান, বয়সজিনত কারণ ব্যতীত সবচেয়ে বেশি ডলফিনের মৃত্যু হয় জেলেদের ফাঁস জালে আটকা পড়ে। এছাড়া নদী দূষণ, প্লাস্টিক পণ্য নদীতে ফেলা, মাছ ধরতে বিষয় প্রয়োগ, নদীর গভীরতা কমে যাওয়া ইত্যাদি ডলফিনের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, নৌযানের সোনারের আঘাতেও প্রতিবছর অনেক ডলফিনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডলফিনের তেল থেকে ব্যথানাশক ওষুধ তৈরির মতো কুসংস্কার রয়েছে। মাছ ধরার টোপ হিসেবেও ডলফিনের তেলের ব্যবহার করে জেলেরা। এসব কারণেও অনেক সময় ডলফিন শিকার করে তারা।
আইন কী বলে
বাংলাদেশ বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, হালদা নদীতে গাঙ্গেয় ডলফিনের বাস। তবে শুধু এই ডলফিনই নয়, আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে সব ধরনের ডলফিনই সংরক্ষিত।
তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুযায়ী ডলফিন হত্যা করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া মৃত ডলফিনের দেহাবশেষ অবৈধভাবে কারও কাছে পাওয়া গেলেও সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডই হতে পারে।
