জাতীয় ডেস্ক :
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে জঙ্গলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে চার শিক্ষিকাকে হেনস্তা ও হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি রানা নামে এক যুবক; যিনি ‘ভিআইপি’ রানা নামে পরিচিত।
র্যাব জানায়, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ এলাকায় স্কুলগামী ছাত্রীদের নিয়মিত উত্ত্যক্ত করাই ছিল তার কাজ। স্থানীয় বখাটেদের নিয়ে গড়ে তোলেন সংঘবদ্ধ চক্র। স্কুলগামী ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে ভিডিও তৈরি করে নিজেদের ইমো গ্রুপে ছড়িয়ে দিত। আবার জোর করতো টিকটক ভিডিও বানাতেও। তার কথায় রাজি না হলে নানা রকম ভয়ভীতি দেখাত। কোনো ছাত্রী প্রতিবাদ করলে এসিড নিক্ষেপের হুমকি দেয়া হতো। স্থানীয় কেউ বাধা বা প্রতিবাদ করলে তাকেও দেয়া হতো হুমকি।
রানাসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর বুধবার (১৫ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
এতে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১২ জুন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার জঙ্গলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক নির্বাচনী ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলাকালে বহিরাগত কতিপয় ছেলে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় উঠে ছবি তোলার চেষ্টা করে। স্কুলের কয়েকজন শিক্ষিকা তাদের স্কুল থেকে চলে যেতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বখাটে ছেলেরা তাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। ওই দিন বিকেলে স্কুল শেষে শিক্ষিকারা অটোরিকশা যোগে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে করিমগঞ্জ থানাধীন তালিয়াপাড়া এলাকায় বখাটেরা তাদের অটোরিকশার গতিরোধ করে।
এ সময় তারা শিক্ষিকাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, শ্লীলতাহানী ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ওই ঘটনায় বখাটে ছেলেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
এ ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় একটি মামলা করে। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১৪ এর একটি দল মঙ্গলবার রাতে কিশোরগঞ্জ ও রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা থেকে আসামি সৌরভ মিয়া ওরফে বাবু (১৭), সোহান ওরফে হিরা (১৭), সীমান্ত (১৭) এবং ঘটনার প্রধান আসামি আল আমিন ওরফে ভিআইপি রানাকে (২২) গ্রেফতার করে।
কমান্ডার মঈন বলেন, রানা এলাকায় উঠতি বয়সী কিশোরদের নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলে। যার নেতৃত্ব নিজেই দিচ্ছিল। সে তার এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের বেশ কিছুদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। চক্রের অন্য সদস্যরাও বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতো। কোনো ছাত্রী প্রতিবাদ করলে সে তাদের এসিড নিক্ষেপে ঝলসে দেয়ার হুমকি দিত। স্থানীয় কেউ বাধা দিলে বা প্রতিবাদ করলে সোহেলের নেতৃত্বে চক্রের সদস্যরা তাদের বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং রাস্তাঘাটে হেনস্তা করত।
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, ভিআইপি রানার সুনির্দিষ্ট পেশা নেই। রানা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ছাড়া সবার বয়সই ১৮ বছরের নিচে। তাদের কেউই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ পাইনি। তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো অপরাধে থানায় মামলার তথ্যও নেই। তবে তারা ভয় প্রদর্শন, ব্ল্যাকমেইল করা, টিকটক ভিডিও তৈরি করে নিজেদের গ্রুপে শেয়ার করত। তাদের গ্রুপে ৭-৮ জন রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন রয়েছে যে ওই স্কুলে পড়ে। মূলত আধিপত্য বোঝাতেই স্কুলে গিয়ে টিকটক ভিডিও বানানোর চেষ্টা করছিল ও ছবি তুলেছিল।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার তিনজনই যেহেতু ১৮ বছরের নিচে সেজন্য তাদের আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সমাজসেবা অধিদফতরে হস্তান্তর করব। আর রানাকে থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হবে।
