হোম জাতীয় সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করলেই মিয়ানমার থেকে গুলি!

সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করলেই মিয়ানমার থেকে গুলি!

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 22 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাটি নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট নামে পরিচিত। আর সেই নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমারের অজ্ঞাত একটি অস্ত্রধারী গোষ্ঠী। যে গোষ্ঠীটি কোনোভাবেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে ট্রলার বা স্পিডবোট চলাচল করতে দিচ্ছে না। ওই রুটে ট্রলার বা বোট দেখার সঙ্গে সঙ্গেই গুলিবর্ষণ করছে।

টানা ৬ দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার (১১ জুন) টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী ৫ যাত্রী নিয়ে যাওয়া একটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে আবারও গুলিবর্ষণ করেছে ওই গোষ্ঠী। এতে হতাহত না হলে দ্বীপজুড়ে এখন চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এতে দ্বীপবাসীর খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে।

এ নিয়ে সেন্টমার্টিন স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি ও দ্বীপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানান, চিকিৎসার জন্য জরুরিভাবে টেকনাফে আসা ৫ যাত্রীর সেন্টমার্টিন যাওয়ার প্রয়োজন হলে চালক মোহাম্মদ বেলাল সকাল সাড়ে ১০টায় টেকনাফের কায়ুকখালী ঘাট থেকে যাত্রা করেন। বোটটি শাহপরীর দ্বীপ অতিক্রম করে নাফ নদের বদরমোকামের গোলগরা পয়েন্টে পৌঁছায়। এটি নাইক্ষ্যংদিয়ার বিপরীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের এলাকা। কিন্তু এরপরও মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে ট্রলারে অবস্থানরত অস্ত্রধারীরা বাংলাদেশের জলসীমায় এগিয়ে এসে গুলিবর্ষণ করে। টানা ১০-১২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। চালক বেলাল অবস্থা বুঝে স্পিডবোট দ্রুত চালিয়ে পশ্চিমের বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে যায়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। বোটটি দুপুর ১২টার দিকে দ্বীপে গিয়ে পৌঁছায়।

দ্বীপের ওই জনপ্রতিনিধি আরও জানান, কাঠের ট্রলার বা সার্ভিস বোটে যাত্রী ও পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে একটি জটিলতা রয়েছে। ট্রলারগুলিকে নাফ নদের এবং বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে এসে মিয়ানমারের কাছা-কাছি এলাকা অতিক্রম করতে হয়। এটা করতে গিয়ে ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করে মিয়ানমার থেকে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি। এরপর ৮ জুন শনিবারও পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলি করে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি। কিন্তু স্পিডবোট অনেক দূর থেকে চলাচল করলেও কেন বাংলাদেশের জলসীমায় এসে গুলি করছেন বোঝা যাচ্ছে না।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

তিনি জানান, বিষয়টি সব পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এর প্রেক্ষিতে দ্বীপে অবস্থানরত মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বেন। ওই এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, টেকনাফের নাফ নদে ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাটি নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারে অবস্থানরত অস্ত্রধারীরা কারা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তারা ট্রলারে অস্ত্র হাতে নাফ নদে টহল দিচ্ছে। আর কোনোভাবেই সেন্টমার্টিনগামী ট্রলার বা স্পিডবোট দেখলেই গুলি করছে। মঙ্গলবারের ঘটনার পর দ্বীপজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেন্টমাটিন-টেকনাফ যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট হতে শুরু করেছে। সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর অবস্থা খুব সংকটাপন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ডের জাহাজে খাদ্যপণ্য নেয়ার দাবি জানান তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই ওই নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া বিষয় চিন্তা করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে ৯ জুন আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে অবহিত করা হয়েছে। এখন সেন্টমার্টিনে পণ্য পাঠানোর জন্য বঙ্গোপসাগরই ভরসা। বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায় কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন