আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফর নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। বলেছে, পেলোসির তাইওয়ান সফর ‘সম্পূর্ণ উস্কানিমূলক’। সফর নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পেলোসি ইতোমধ্যে তাইওয়ান গেছেন কিনা সে ব্যাপারে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তবে তার এ সফরের তোড়জোড় একেবারেই উস্কানিমূলক।’ পেশকভ আরও বলেন, মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকারের তাইওয়ান সফর চীনের সঙ্গে সংঘাত উস্কে দিতে পারে। এমনকি পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এদিকে পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফরের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনকে একের পর এক হুশিয়ারি অব্যাহত রেখেছে চীন। এ উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলে একটি বিমানবাহী রণতরীসহ অন্তত ৪টি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ মুহূর্তে এশিয়া সফরে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর কর্মকর্তা ন্যান্সি পেলোসি। রোববার (৩১ জুলাই) হাওয়াই দ্বীপ পরিদর্শনের মধ্যদিয়ে তার চারদিনব্যাপী সফর শুরু হয়।
সোমবার (১ আগস্ট) তিনি সিঙ্গাপুরে যান। তার এ সফর পুরো এশিয়াজুড়ে উত্তেজনা উস্কে দিয়েছে। মঙ্গলবারও (২ আগস্ট) চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পেলোসি তাইওয়ান প্রবেশ করলে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের তীব্র হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও মালয়েশিয়া সফর শেষে মঙ্গলবারই (২ আগস্ট) তাইওয়ান যাচ্ছেন পেলোসি। তার তাইওয়ানের রওয়ানা হওয়ার আগেই দক্ষিণ চীন সাগরে পৌঁছে গেছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান।
মার্কিন নৌবাহিনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানবাহী রণতরীটি এই মুহূর্তে তাইওয়ান ও ফিলিপিন্সের পূর্বে ও জাপানের দক্ষিণে ফিলিপিন্স সাগরে অবস্থান করছে। এর সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে আরও অন্তত তিনটি যুদ্ধজাহাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে তারা।
তার সম্ভাব্য সফরের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছে চীন। দেশটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পেলোসি তাইওয়ানের মাটিতে পা রাখলে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না বেইজিং।
এর আগে চলতি সপ্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক টেলিফোনালাপে সতর্ক করে দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, তাইওয়ান ইস্যুতে ‘যারা আগুন নিয়ে খেলবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এবং হোয়াইট হাউসও পেলোসিকে তাইওয়ানে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তবে চীনকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে জো বাইডেন একই ফোনালাপে বলেছেন, দ্বীপ রাষ্ট্রটির (তাইওয়ান) মর্যাদা পরিবর্তনের জন্য যেকোনো একতরফা পদক্ষেপের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি তাইওয়ান প্রশ্নে মার্কিন নীতি কোনো পরিবর্তন হয়নি।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, পেলোসি মঙ্গলবার (২ আগস্ট) তাইপে পৌঁছাবেন। এ ব্যাপারে চীনের হুমকি-ধামকির ভীত না যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তাইওয়ানের কাছাকাছি সামরিক সরঞ্জাম ও উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
পেলোসির তাইওয়ান সফর সামনে রেখে তাইওয়ান প্রণালীতে নিজের শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছে চীন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীকে বিভক্তকারী মধ্যরেখার কাছাকাছি উড়তে দেখা গেছে। এর আগে রোববার (৩১ জুলাই) তাইওয়ানের সবচেয়ে কাছের ফুজিয়ান প্রদেশেব্যাপক আকারে মহড়া চালায় চীনের সামরিক বাহিনী।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকালেই তাইওয়ান প্রণালীর জলপথের মাঝামাঝি ওই সীমান্তরেখার কাছে মহড়া দেয় চীনা বিমানগুলো। এছাড়া সোমবার থেকে বেশ কয়েকটি চীনা যুদ্ধজাহাজ অনানুষ্ঠানিক বিভাজন রেখার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
