হোম অন্যান্যসারাদেশ সবুর তুমি জমি নিয়ে থাক সুইসাইড নোট লিখে গৃহবধুর আত্মহনন ——–এ দায় কার?

নিজস্ব প্রতিনিধি :

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা গ্রামে পরিবারিক কলহের জেরে গৃহবধুর আত্মহননের ঘটনায় একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে ।সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে । ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত রবিবার জেলার পাটকেলঘাটা থানা নগরঘাটা গ্রামের সবুর গাইনের দ্বিতীয় স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম লাশ বাড়ির পাশের ড্রেন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ । এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দ্বায়ের করা হয়। এদিকে ঐ গৃহবধূর মৃত্যুর পরে রহস্যজনকভাবে তার ঘরের তোশকের নিচ থেকে একটি সুইসাইড নোট ও ২টি পাঁচ শত টাকার নোট উদ্ধার হয় । তবে নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবি সুইসাইড নোট ফেরদৌসী খাতুনের লেখা নয়।

অনুসংন্ধানে গেলে স্থানীয়রা জানায়, ২০-২৫বছর আগে আগে নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি গ্রামের মৃত শেখ জাকির হোসেনের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহর সাথে সরুলিয়া ইউনিয়নের ভারসা গ্রামের ইনসাফ সরদারের বড় মেয়ে ফেরদৌসী বেগমের(৪৫) বিয়ে হয়। এরপর তাদের কোলজুড়ে ২টি মেয়ে ও ১টি ছেলে আসে। হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে ২০০৬ সালে শেখ আব্দুল্লাহ মারা যায়। মৃত্যুর পূর্বে আব্দুল্লাহ প্রায় ৪ একর জমির মালিক ছিলেন । সেই সম্পত্তি ও টাকা আত্মসাৎ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে একই গ্রামের লুৎফর গাইনের ছেলে নারীলোভী আব্দুস সবুর গাইন (৪৮)। এক পর্যায়ে মৃত আব্দুল্লাহ’র স্ত্রী ফেরদৌসী খাতুনকে কৌশালে বিয়েও করে সে । বিয়ের পর লোভী সবুর টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল মিলে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় বলে লোকেমুখে ফেরদৌসীর প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েরা জানতে পারে ।পরবর্তীতে এলাকার মেম্বারের মাধ্যমে সুবুরের কাছে পাওনা টাকা চেয়েছিল ফরদৌসীর বেগমও তার প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েরা। সবুর উপায় না পেয়ে গৃহবধূকে কৌশলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে বাড়ির পাশ্ববর্তী ধান ক্ষেতের ড্রেনে ফেলে দেয় বলে এলাকায় জনশ্রুতি আছে। এ মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চলছে রহস্যের গুঞ্জন। স্থানীয় এক বাসিন্দা  জানায় আমি লোকমুখে শুনেছি ঐ গৃহবধূকে শ্বাসরোধের মাধ্যমে হত্যা করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কে বা কারা একটি বিষের বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ির পাশ্ববর্তী ড্রেনের মধ্যে পশ্চিম দিকে ফেলে রাখে। তিনি আরও জানান, টাকা পয়সা নিয়ে সবুর আর ফেরদৌসির মধ্যে প্রায় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকত। মাঝে মাঝে টাকার জন্য সবুর ফেরদৌসি কে মারপিট করত । মৃত্যুর পূর্বের রাতে সুবর ফেরদৌসীকে মধ্যে হাতাহাতির হয় পরের দিন সকালে রহস্যজনক ভাবে তার লাশ উদ্ধার হয়। তবে প্রভাবশালী একটি মহলের ভয়ে মুখ খুলতে কেউ সাহস পাচ্ছেনা।

নিহত গৃহবধুর ছেলে মুন্না জানায়, সবুর আমার আম্মুর বেশ টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছিল। এ নিয়ে বাড়িতে প্রায় সবুরের সাথে আশান্তি চলত। বিষয়টি আম্মু আমাকে জানালে আমি টাকার জন্য সবুরকে চাপ দিলে সে তালবাহানা শুরু করে । আমি খুলনায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কারনে বাইরে থাকি। ঘটনার দিন আমার বোনরা নানা বাড়িতে ছিল। রবিবার সকালে আমার আম্মু আত্মহত্যা করেছে বলে জানতে পারি। কি কারনে যে আত্মহত্যা করবে তা আমার মাথায় আসছেনা । ঘটনার পরের দিন আমি আম্মুর বিছানার নিচে থেকে ২টি পাঁচশত টাকার নোট ও একটি চিঠি পেয়েছি। এটি আমার আম্মুর হাতের লেখা তা আমি শিওর না। ঘটনাটি আত্মহত্যা নাকি সুপরিকল্পিত হত্যা সেটা এখনও শিওর বলতে পারব না। এদিকে ঘটনার দিন থেকে আম্মুর দ্বিতীয় স্বামী সবুর পলাতক রয়েছে। তবে আমি আমার আম্মুর মৃত্যুর বিচার চাই। নিহত গৃহবধূর মেয়ে আকলিমা খাতুন জানান, বাবার মৃত্যুর পরে আমার মা একই এলাকার সবুর নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। কিন্তু অদ্যাবধি আমার মা আমাদের বাড়িতে থাকেন। কখনও সবুরের বাড়িতে ছিলো না। আমার বাবার প্রায় ৪ একর জমির মালিক ছিল। এ জমি অধিকাংশ আমার মা এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বন্ধক রেখে প্রায় ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা নিয়ে সবুরকে দিয়েছিল। বর্তমানে আমার মা স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল, তার নামে রেজিষ্ট্রীকৃত ৫ শতক জমির দলিল সবুরের কাছে আছে বলে আমরা তা লোকমুখে জানতে পেরে মাকে জিজ্ঞাসা করি ।

মা আমাদের কাছে বলেছিল ১ মাসের মধ্যে সবুরের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে তাদের টাকা পরিশোধ করে দিবে । ঘটনার পরের দিন কে বা কারা আমার মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমার মায়ের ঘরের বিছানার নিচে একটি সুইসাইড নোট ও ২টির পাঁচ শত টাকার নোট রেখে দিয়েছে। ঐ নোটের লেখার সাথে আমার মায়ের হাতের লেখার কোনো মিল নেই। আমার মায়ের হত্যার বিচারের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই। নগরঘাটা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বর আব্দুস সামাদ জানান, আত্মহত্যার বিষয়টি আমি শুনেছি তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা বলতে পারবনা । তবে সবুর ও ফেরদৌসির মধ্যে টাকার একটি লেনদেন ছিল । তিনি আরও জানান, পুলিশ চুপচাপ হয়ে গেল আপনারা সাংবাদিক এখন কি করবেন। নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপু জানান, আত্মহত্যার বিষয়টি আমি শুনেছি তবে ঘটনার বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এ বিষয়ে নিহতের দ্বিতীয় স্বামী সবুর গাইনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করলে, সে পলাতক থাকার কারনে তার ব্যাবহারিত ফোন নাম্বারটি ও বন্ধ পাওয়া যায় বলে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পাটকেলঘাটা থানা পরিদর্শক(ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ জানান, ঘটনার দিন থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছিল ময়নাতদন্তের রিপোট আসার পর আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন