নিউজ ডেস্ক:
সঞ্চয়পত্র এবং বেসরকারি বন্ডের জন্য আলাদা কেনাবেচার বাজার (সেকেন্ডারি মার্কেট) তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই ধরনের একটি বাজার দ্রুত স্থাপন করা সম্ভব, যা দেশের আর্থিক কাঠামোকে মজবুত করবে।
আজ সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বন্ড ও সুকুক মার্কেটের সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে গভর্নর এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, বর্তমানে সঞ্চয়পত্র আংশিকভাবে বাজারের সঙ্গে যুক্ত হলেও, এটিকে পুরোপুরি লেনদেনযোগ্য করে তোলা উচিত। এতে গ্রাহকেরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি একটি শক্তিশালী সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরি হবে এবং বাজারে তারল্য বৃদ্ধি পাবে। একইভাবে, বেসরকারি বন্ডকে লেনদেনযোগ্য করার পরামর্শ দেন গভর্নর। তার মতে, একটি সঠিক কাঠামো নিশ্চিত করা গেলে রাতারাতি বন্ড মার্কেট দ্বিগুণ হতে পারে, যা পুরো আর্থিক খাতের জন্য ইতিবাচক হবে।
আহসান এইচ মনসুর বন্ড বাজারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের উৎস হিসেবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি তহবিলের ওপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারি পেনশন ব্যবস্থা, করপোরেট পেনশন ফান্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং বেনেভোলেন্ট ফান্ড—এসবকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য একটি কার্যকর পেনশন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা প্রয়োজন, যা তহবিল ব্যবস্থাপনার সঠিকতা নিশ্চিত করবে।
সেমিনারে গভর্নর বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামোর সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ তুলনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা মূলত বন্ডনির্ভর, যেখানে প্রায় ১৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের বন্ড ইস্যু করা হয়েছে, যা বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ১৩০ শতাংশ। এর বিপরীতে, বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো মূলত ব্যাংকনির্ভর। তিনি বলেন, এখানে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হলো স্টক মার্কেট, যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৯০ ট্রিলিয়ন ডলার। আর তৃতীয় বৃহত্তম হলো মানি মার্কেট (নগদ অর্থের বাজার), যার আকার মাত্র ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। তিনি আরও জানান, দেশের বিমা খাত জিডিপির মাত্র ০.৪ শতাংশ, যা গণনায় ধরার মতোও নয়।
গভর্নর বলেন যে, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও চাহিদা ও সরবরাহ—উভয় দিক থেকেই বন্ড বাজার গড়ে তোলা দরকার। বর্তমানে বাজারে সরকারি বন্ডের আধিপত্য রয়েছে, কিন্তু করপোরেট বন্ড মার্কেট প্রায় নেই বললেই চলে। তিনি এর পেছনে কারণ হিসেবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতাকে দায়ী করেন। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, এর পেছনে ঋণ পরিশোধ না করার সুযোগ বা রাজনৈতিক প্রভাবের মতো কিছু সুবিধা কাজ করতে পারে।
সুকুকের বাজার (ইসলামি বন্ড) খুবই ছোট উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি সুকুক ইস্যু হয়েছে, যার মোট মূল্য ২৪ হাজার কোটি টাকা। তিনি দ্রুত এই বাজার বড় করার জন্য একটি নতুন ধারণার কথা বলেন। তিনি পরামর্শ দেন, যমুনা বা পদ্মা সেতুর মতো আয়-উৎপাদনকারী প্রকল্পগুলোর টোল আদায় বা মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পের আয়কে ‘সিকিউরিটাইজ’ করে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। এই ধরনের কাজ পরিচালনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ কার্যকরী বিভাগ থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
অনুষ্ঠানের শেষে আহসান এইচ মনসুর জানান, বন্ড মার্কেট উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। খুব শিগগিরই সুনির্দিষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এই সুপারিশগুলোতে প্রচলিত এবং সুকুক উভয় ধরনের বন্ডের উন্নয়নের দিকনির্দেশনা থাকবে।