হোম অন্যান্যসারাদেশ সকলের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নিজ কর্মস্থলে ফিরলেন নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস

নড়াইল অফিস :

কর্মস্থলে ফিরলেন অপদস্তের শিকার নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। ঘটনার দেড় মাস পর বুধবার (৩ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ফুলের মালা দিয়ে নিজ প্রিয় প্রতিষ্ঠানে বিরোচিত সন্মাননায় বরণ করে নেয়া হলো অধ্যক্ষকে।

নড়াইল ১ আসনের সংসদ সদস্য বিএম কবিরুল হক মুক্তি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবস বোস,কলেজের সভাপতি অচিন কুমার চক্রবর্তী,স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তার মাঝে স্বপন কুমার কলেজ এসে পৌছান। এ সময় কলেজ গেটে শিক্ষক মন্ডলী, শিক্ষার্থীসহ একাধিক মহলের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল সুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয়। পরে সাংবাদিদের কাছে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে স্বপন কুমার সবার অকুন্ঠ ভালবাসায় সেদিনের অনভিপ্রেত সেই ঘটনা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার কথা জানান।

এ সময় স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন,সেদিনের ঘটনা কিছু যড়যন্ত্রকারি ঘটিয়েছিল আমি ভুলে যেতে চাই। সবাই আজকে আমাকে যে সন্মান দিয়েছে বিগতদিনের সবকিছু ভুলে সামনের দিকে এগিযে যেতে চাই।

মহানবী সাঃ সম্পর্কে কটুক্তীকারি ভারতের বহিস্কৃত বিজেপি নেতা নুপুর শর্মার সমর্থনে ফেসবুকে ষ্টাটাস প্রদানকারি মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রাহুল দেবকে অধ্যক্ষ সমর্থন দিয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে ধর্ম অবামাননার অভিযোগ তুলে ১৮জুন ঐ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমারকে জুতার মালা পরানোসহ ঐ কলেজে নানা সহিংসতা সংঘঠিত হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ১৭০/৮০জনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করা মামলায় এ পর্যন্ত মোট ৯জন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত অন্যদের সনাক্তের কাজ চলছে।

প্রসঙ্গত: মিজার্পুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ’র প্রথম বর্ষের ছাত্র রাহুল দেব রায় গত ১৭ জুন ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার একটি ছবি দিয়ে তার সমর্থনে লেখে “ প্রণাম নিও বস নুপুর শর্মা, জয় শ্রী রাম”। পরদিন ১৮ জুন রাহুল দেব রায় কলেজে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠে। তাৎক্ষণিক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস তাকে পুলিশে দেন।

পুলিশ তাকে নিয়ে যেতে গেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বাঁধা দেয়। এরই মধ্যে কে বা কারা গুজব ছড়িয়ে দেয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওই ছাত্রকে সমর্থন দিয়েছেন,তার কোন বিচার করতে চাননি। গুজবে এলাকার সাধারণ মানুষ কলেজে এসে বিক্ষোভ করে। এমনকি কলেজে প্রশাসনের সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করে। মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করা হয়। শিক্ষকদের ৩টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেয়া হয়। হুমকি দেয়া হয় শিক্ষকদের। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ।

এ ঘটনায় ১৭ জুলাই উচ্চ আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর পৃথক দু’টি তদন্ত সম্পন্ন করেছে। তদন্ত শেষে কলেজের জিবি এবং কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আকতার হোসেনকে কারণ দশানোর্র নোটিশ দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্থার ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন