হোম জাতীয় মোংলায় বাবার প্রতারণার স্বীকার দুই সন্তান!

জাতীয় ডেস্ক :

মোংলায় এক ইউপি মেম্বারের কু-পরামর্শে বাবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন দুই সন্তান। তারা ১৩ কোটি টাকার জমি হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জাহাঙ্গীর মল্লিকের অপতৎপরতায় চৌকিদারের মোড়ে স্থানীয় নরত্তোম বিশ্বাস ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের প্রায় সাড়ে ছয় একর জমি ইতোমধ্যে হাত ছাড়া হয়ে গেছে। মেম্বার জাহাঙ্গীর মল্লিক নরোত্তম ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাসকে কৌশলে নিজের কব্জায় নিয়ে প্রায় ১২ কোটি ৭২ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেন মেম্বার। এর মধ্যে নিজের নামেও বেশ কয়েক বিঘা জমি জোরপূর্বক দলিল করে নেন মেম্বার জাহাঙ্গীর। মোংলা থানাসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে দায়ের হওয়া অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানান নরোত্তম বিশ্বাস।

ভুক্তভোগী নরোত্তম বিশ্বাসের থানায় দেওয়া অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাসের বেপরোয়া চলাফেরার কারণে দাদা দর্শন বিশ্বাস ও দাদি পদ্মবতী বিশ্বাস তাদের ৪ নাতির নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন।

৪ নাতিরা হলেন- নরোত্তম বিশ্বাস, প্রেমানন্দ বিশ্বাস, গৌরঙ্গ বিশ্বাস ও নিত্যানন্দ বিশ্বাস। ১৯৮২ ও ৮৮ সালে মালগাজী মৌজার ৪ একর ১৬ শতক করে মোট ৩২ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করেন তারা।

এরমধ্যে গৌরঙ্গ বিশ্বাস ও নিত্যনন্দ বিশ্বাস তাদের অংশের জমি বিভিন্ন সময় বিক্রি করে দেন। বাকি দুই ভাই নরোত্তম ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের জমির উপর নজর পড়ে বাবার। পরে জাহাঙ্গীর মল্লিকের কুপরামর্শে তার ২ ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ৮ একর ৩২ শতক জমি পাওয়ার (আমোক্তার নামা) লিখে নেন বাবা।

কিন্তু কিছুদিন পর ২ ভাই বুঝতে পারেন তাদের জমি অন্যত্র বিক্রি করা শুরু করেছেন বাবা। এ খবরে ২০১৫ সালে তাদের বাবাকে দেওয়া জমি বিক্রির পাওয়ার (আমোক্তার নামা) বাতিলে আদলতে মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। এরপরই বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

থানায় আর অভিযোগ করা হয়, আদালতের মামলা ও নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই ভূমিদস্যু জাহাঙ্গীর মল্লিকের খপ্পরে পড়ে ৬ একর জমি বিক্রি করে নরোত্তম ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের বাবা। বিক্রি হওয়া প্রায় ১৩ কোটি টাকার জমির মধ্যে বিতর্কিত মেম্বার জাহাঙ্গীর একাই কিনেছেন ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার জমি।

এ বিষয়ে বহুবার সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করতে গেলে ভুক্তভোগী নরোত্তম বিশ্বাসকে জাহাঙ্গীর মেম্বার তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলে থানায় অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, সরেজমিনে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মোংলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, কোনো ব্যক্তির পাওয়ার নামার জমির ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে সেই জমি বিক্রি বা অন্যত্র হস্তান্তর করতে পারবে না। যদি করতে যায় তাহলে আদালত অবমাননার সামিল হবে।

এ বিষয়ে কৃষ্ণপদ বিশ্বাসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি জমি সংক্রান্ত কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, যা জানার, জাহাঙ্গীর মেম্বারের কাছে শোনেন বলেই ফোন কেটে দেন।

তবে জাহাঙ্গীর মেম্বারের দাবি, পাওয়ার নামা নিয়ে কৃষ্ণপদ বিশ্বাস জমি বিক্রি করছেন। আমাকে কী কারণে জড়ানো হচ্ছে জানি না। তবে নরোত্তম বা প্রেমানন্দ বিশ্বাসের কোনো জমি আমি ক্রয় করিনি বলেও জানান মেম্বার জাহাঙ্গীর মল্লিক।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন