আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্বের বহু দেশের মতো মালয়েশিয়াতেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হচ্ছে মহানবী হযরত মোহাম্মদের (সা.) জন্মদিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ রবিউল আউয়াল) বিশ্বজুড়ে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হচ্ছে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর শুভ আবির্ভাব ঘটে।
দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। এই দিনে আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আবার ৬৩ বছর বয়সে একই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন।
মালয়েশিয়ায় এ দিবসটিকে বলা হয় ‘মওলিদুর রাসুল’ অর্থাৎ নবীর জন্মদিন। দিবসটি উপলক্ষে কুচকাওয়াজ ও সেলাওয়াতসহ (নবী মুহাম্মদের প্রশংসা) বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে মহানবী হযরত মোহাম্মদের (সা.) প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছে দেশটির মুসলিমরা।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটায় পুত্রাজায়ায় আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (পিআইসিসি) সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
‘পারপাদুয়ান তেরাস মালয়েশিয়া মাদানী’ (মালয়েশিয়া মাদানীর একতা স্তম্ভ) শীর্ষক এই সমাবেশে মালয়েশিয়ার রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং আল-সুলতান আবদুল্লাহ রিয়াতউদ্দিন আল-মুস্তাফা বিল্লাহ শাহ ও রানি পারমাইসুরি আগং টুঙ্কু হাজাহ আজিজাহ আমিনাহ মাইমুনাহ ইস্কান্দারিয়াহ উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী দাতিন সেরি ড. ওয়ান আজিজাহও উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে নিজের বক্তব্যে সমাজে ঐক্য গড়ে তুলতে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর পথ অনুসরণ করার জন্য মালয়েশিয়ানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং আল-সুলতান আবদুল্লাহ রিয়াতউদ্দিন আল-মুস্তাফা বিল্লাহ শাহ।
সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইসলামি আইন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদের (স.) মহৎ মূল্যবোধ ও আদর্শ মেনে চললে মালয়েশিয়া সত্যিকার অর্থে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাবে।
তিনি আরও বলেন, জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে পারস্পরিক স্নেহ ও শ্রদ্ধা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে মহানবীর (সা.) কর্মপদ্ধতি অনুকরণীয়। সকল উম্মাহকে মহানবীর (স.) শিক্ষাকে সমুন্নত রাখতে হবে। যাতে মানবতার মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে দেশকে এমন একটি সম্প্রীতিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজে পরিণত করা যায়।
সমাবেশের পর প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম বিষয়ক দফতরের তত্ত্বাবধানে বিশাল এক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। যা সেরি জেমিলাং ব্রিজ থেকে পিআইসিসি পর্যন্ত এক দশমিক এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ সময় হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল নবীর দরুদ ও সালাম।
নবীর প্রতি সেলাওয়াত ও দরুদ জানিয়ে লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে এতে অংশ নেয় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী ১৩১টি দল। সব মিলে মোট ৩ হাজার ৭০০ জন এতে অংশ নিয়েছিলেন। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় এদিন মসজিদ মাদ্রাসা ও স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও দৃষ্টিনন্দন র্যালি বের করেন।
পুত্রাজায়ার পাশাপাশি রাজ্য পর্যায়ে জোহর, মেলাকা, নেগেরি সেম্বিলান, তেরেঙ্গানু, পেরাক, কেদাহ, পাহাং, সেলাঙ্গর ও পেনাংয়েও ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত হয়েছে। এসব রাজ্যে নবীর স্মরণে সভা-সমাবেশ ও শোভাযাত্রা হয়েছে। যাতে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ।