মোহাম্মদ আরীফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ :
কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার একমাত্র পাবলিক লাইব্রেরীতে পর্যাপ্ত বই থাকলেও নেই পাঠক। পাঠক শূন্যতায় মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী স্মৃতি গ্রন্থাগার (পাবলিক লাইব্রেরী) থাকছে নিয়মিত বন্ধ! আধুনিক এ যুগে যুব সমাজের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ না থাকায় কুলিয়ারচরের এ পাবলিক লাইব্রেরীটি রাখতে হচ্ছে তালবদ্ধ। কুলিয়ারচরের প্রবীণ ও বই পড়ুয়া ব্যাক্তিরা বার্ধক্য জনিত নানা প্রতিবন্ধকতায় এখন আর বই পড়তে আসেন না লাইব্রেরীতে। সচেতন স্থানীয় কিছু যুবক বিভিন্ন সময় মহারাজের ভালোবাসায় ও পাবলিক এ লাইব্রেরীকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি এ পর্যন্ত। প্রবীণ ও বইপ্রেমী মানুষের দাবী যুব সমাজকে বই পড়তে উদ্ভুদ্ধ করা না গেলে এক সময় মহারাজ মানুষের হৃদয় থেকে হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চিরতরে হারিয়ে যাবে পাঠাগারে পাঠচর্চা।
পাবলিক লাইব্রেরী বন্ধ দেখে রেজওয়ান আহমেদ তামিম নামের এক যুবক বলেন, আমি ঢাকা থেকে গ্রামে বেড়াতে এসেছি। বই পুস্তকে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর নাম জেনেছি। এখানে এসে দেখলাম তার স্মৃতির স্বরণে স্থাপিত পাবলিক লাইব্রেরী তালাবদ্ধ। পরে জানলাম পাঠক না আসার কারণে লাইব্রেরীটি প্রায়-ই বন্ধ থাকে। কুলিয়ারচর থেকে এত বড় একজন ব্যাক্তি ও তার স্মৃতি হারিয়ে যেতে পারেনা।
মনির হোসেন নামের অন্য এক যুবক বলেন, মানুষ এখন ইন্টারনেটে নিয়মিত ব্যাস্ত থাকে। এখন বই পড়ার সময় নেই কারো। তরুণ প্রজন্মকে বই পড়তে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারলেই পাবলিক লাইব্রেরীটি তার প্রাণ ফিরে পাবে। প্রাণ ফিরে পাবে মহারাজ।
পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা প্রবীণ শিক্ষক অনিল চন্দ্র সাহা বলেন, এখন আর মানুষ লাইব্রেরীতে বই পড়তে আসেনা। বয়স হয়ে যাওয়ায় লাইব্রেরীতে আমরাও আগের মত সময় দিতে পারিনা। তরুণ প্রজন্মের হাতে আমরা দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চাই। নিয়মিত লাইব্রেরীতে পাঠকের প্রাণ চাঞ্চল্যতা দেখতে চাই।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক বিপ্লবী মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী। গত ৫ মে তার ১৩৪ তম জন্মদিন অনেকটা নীরবেই কেটে গেলো। সরকারী কোন উদ্যোগ না থাকায় মহারাজ হারিয়ে যাচ্ছে কুলিয়ারচর তথা বাংলাদেশ হতে। বাংলার নির্যাতিত- নিপীড়িত ও মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় এ মহারাজের জন্ম ১৮৮৯ সালের ৫ মে সে সময়ের ময়মনসিংহ জেলায়। যা বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার কাপাসাটিয়া গ্রামে। এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম তার। মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী কেবল বিপ্লবী ছিলেন না। তিনি একাধারে লেখক, কবি, চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্নেষক ছিলেন। লিখেছেন ‘জেলে ত্রিশ বছর ও পাক- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ নামক বই। ১৯৭০ সালের ৯ আগস্ট রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন এ মহান নেতা।