রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) :
রোজায় কলায় ছলা কলা দেখিয়ে মজা লুটছে মধ্যস্বত্বভোগিরা। যশোরের মনিরামপুরে কলার কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যাপারীরা কৃষকের ক্ষেত থেকে প্রায় সেই আগের দামে (রোজার আগে দাম) কাঁদি হিসেবে কলা কিনে আনলেও সেই কলা পাকিয়ে বাজারে কেজি হিসেবে প্রায় দ্বিগুন দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
রোজায় পাকা কলায় দাম বাড়লেও চাষীদের কোন লাভ নেই। যে দামে কলা ক্ষেত থেকে কেনা হচ্ছে বাজারে তার দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। শুধু চাষীর ক্ষেত থেকে ব্যাপারিরা কিনে আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করে এবং সেখান থেকে খুচরা বিক্রেতারা কিনে বাজারে বিক্রি করছে। চাষী থেকে তিন হাত ঘুরেই বাজারে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। কলার সব মজা লুটছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। যারা কৃষকের ক্ষেত থেকে কলা কিনছেন তারাই সিন্ডিকেট করে কলার মূল ব্যবসায়ী (আড়ৎদার)-এর কাছে সংকট দেখিয়ে বেশি দাম হাকাচ্ছেন।
মূলতঃ বেশি দাম পাওয়ার লোভেই কলার কৃত্রিম সংকট দেখানো হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের মন থেকে অতি লোভের স্পৃহা দূর না হলে বাজার মনিটোরিং-এ তেমন কাজে আসবে না বলে অনেকে মনে করেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে পাকা কলার চাষ হয়েছে।
এরমধ্যে সাগর কলা ২২ হেক্টর, দুধ সাগর ১০ হেক্টর, বয়ারবাগ ৩ হেক্টর, সবরি ৬ হেক্টর, চাপা সবরি ২ হেক্টর এবং মর্তমান কলা ২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এছাড়া বাড়ির আশে-পাশে, ঘের ও পুকুর পাড়ে আরও প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের পাকা কলার চাষ হয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবার উপজেলায় কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেক চাষী দাম বেশি পাওয়ার লক্ষ্যে ব্যাগিং পদ্ধতিতে কলার আবাদ করেছেন। এতে করে একদিকে পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পেয়ে কলায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় অপরদিকে কলা বড় হওয়ায় দামও বেশি পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ৪শ’ কলা গাছ লাগানো যায়। এতে করে এবার ৫০ একর জমিতে লাগানো কলা গাছের সিংহভাগ কাঁদি এসেছে।
রোজার মাসে অধিকাংশই পাকার উপযোগি হয়েছে। ৫০ একর জমিতে লাগানো ৬০ হাজার কলা গাছে কাঁদি হয়েছে। যার সিংহভাগ বতি ( পাকার উপযোগি) হয়েছে। ৬০ ভাগ কলার কাঁদি পাকার উপযোগি হলেও তা ৩৬ হাজার কাঁদিতে দাড়ায়। যদি প্রতি কাঁদি কলার গড় ওজন ১২ কেজি হয়। কেজিতে গড়ে ১০টি কলা হলে ৩৬ হাজার কাঁদিতে ৩ লাখ ৬০ হাজার কলা থাকার কথা রয়েছে। পৌরশহরের কলার বড় আড়ৎদার আব্দুল হাই জানান, রোজার আগে ৫টি আড়ৎ থেকে গড়ে ৫০/৬০ মন কলা বিক্রি হতো। রোজার প্রথম দিকে প্রায় দ্বিগুন হারে কলা বিক্রি হতো। কিন্তু ইদানিং কলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ব্যাপারিরা চাহিদামত কলা সরবরাহ করতে না পারায় কলা বিক্রি কমে গেছে। কলা চাষী, ব্যাপারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এ চিত্র উঠে এসেছে।
সরেজমিন উপজেলার সালামতপুর গ্রামে গিয়ে মর্তমান সবরি কলা চাষী আনিছুর রহমানের ক্ষেতে ব্যাগিং পদ্ধতিতে কলা চাষের চিত্র চোখে পড়ে। তিনি জানান, গত ১৫ বছর ধরে তিনি কলা চাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি মর্তমান ও সাগর কলার চাষ করেছেন। মর্তমান সবরি কলার কাঁদি ব্যাগিং করেছেন। এতে তিনি বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন। ক্ষেত থেকে ব্যাপারিরা ৪শ’টাকা কাঁদি (এক কাঁদির ওজন ৯/১০ কেজি) হিসেবে করা কিনে যাচ্ছে। যা পাকিয়ে বাজারে প্রায় দ্বিগুন দাম ৮০/৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মধুপুর গ্রামের সাগর কলা চাষী সোলাইমান জানান, তিনি এবার ৮ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে প্রতি কাঁদি কলা ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা দরে কিনছে ব্যাপারিরা। সেই কলা বাজারে প্রায় দ্বিগুন দামে ৬৫/৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ রোজার আগের দামেই তাকে বিক্রি করতে হচ্ছে। ওই ক্ষেতে আসা ব্যাপারি শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, তারা কিনে নিয়ে সীমিত লাভে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। খুচরা বিক্রেতারাই বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে, খুচরা বিক্রেতা কেউ তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।