হোম আন্তর্জাতিক বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর ঢাকা, প্রথম জাকার্তা

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর ঢাকা, প্রথম জাকার্তা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 34 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:

জাতিসংঘের একটি নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর। সেখানে বসবাস করছে প্রায় ৪ কোটি ১৯ লাখ মানুষ। এর পরই রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, যেখানে জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ। এর আগে সবচেয়ে জনবহুল নগর ছিল জাপানের রাজধানী টোকিও।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘনবসতিপূর্ণ জাভা দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত নিম্নভূমির উপকূলীয় শহর জাকার্তা। শহরটি দ্বিতীয় স্থান থেকে টোকিওকে পেছনে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে।

এর আগে ২০০০ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের সর্বশেষ মূল্যায়নে জাপানের রাজধানী টোকিও ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর। তবে বর্তমানে টোকিওর জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় শহরটি নেমে এসেছে তৃতীয় স্থানে। বর্তমানে শহরটিতে প্রায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ বসবাস করে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকা নবম স্থান থেকে উঠে এসে এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগ প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টস ২০২৫’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের মেগাসিটির সংখ্যা বেড়ে ৩৩-এ দাঁড়িয়েছে। মেগাসিটি বলতে যে-সব শহরের জনসংখ্যা ১ কোটির বেশি— সেগুলোকে বোঝানো হয়। ১৯৭৫ সালে বিশ্বে এমন শহর ছিল মাত্র ৮টি, অর্থাৎ গত পাঁচ দশকে এই সংখ্যা চারগুণ বেড়েছে।

এই ৩৩টি মেগাসিটির মধ্যে ১৯টি এশিয়ায় এবং শীর্ষ ১০টির মধ্যে ৯টিই এশিয়ার শহর। জাকার্তা, ঢাকা ও টোকিও ছাড়াও এশিয়ার অন্যান্য শীর্ষ শহরগুলো হলো— ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। এই শহরের জনসংখ্যা ৩ কোটি ২ লাখ। শহরটি ৪ নম্বর জনবহুল শহরের তালিকায় রয়েছে। এরপর রয়েছে চীনের সাংহাই। শহরটির জনসংখ্যা ২ কোটি ৯৬ লাখ। চীনের গুয়াংজু শহরের লোকসংখ্যা ২ কোটি ৭৬ লাখ। ফিলিপাইনের ম্যানিলা শহরে বসবাস করে ২ কোটি ৪৭ লাখ মানুষ। ভারতের কলকাতার জনসংখ্যা ২ কোটি ২৫ লাখ। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে বসবাস করে ২ কোটি ২৫ লাখ মানুষ।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ার বাইরে শীর্ষ ১০ তালিকায় থাকা একমাত্র শহর হলো মিসরের রাজধানী কায়রো। শহরটির জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ।

লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহর ব্রাজিলের সাও পাওলো। শহরটির জনসংখ্যা ১ কোটি ৮৯ লাখ। আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলে সবচেয়ে দ্রুত জনসংখ্যা বাড়ছে নাইজেরিয়ার লাগোসে।

দ্রুত বাড়ছে ঢাকা ও জাকার্তার জনসংখ্যা। ঢাকার দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর একটি হলো গ্রাম থেকে রাজধানীতে মানুষের অভিবাসন। কাজের সুযোগের সন্ধান কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত সমস্যার কারণে বহু মানুষ ঢাকা ছাড়াও অন্যত্র বসবাসের জন্য শহরমুখী হচ্ছে।

একই ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে জাকার্তাও। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে শহরটির প্রায় এক-চতুর্থাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যেতে পারে।

এই সংকট এতটাই গুরুতর যে, ইন্দোনেশিয়া সরকার বোর্নিও দ্বীপের পূর্ব কালিমানতান প্রদেশে নুসান্তারা নামে একটি নতুন পরিকল্পিত রাজধানী শহর নির্মাণ করছে। সেখানে ভবিষ্যতে সরকারি কর্মকর্তা ও সংসদ ভবন স্থানান্তরিত হলেও, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে জাকার্তায় আরও ১ কোটি মানুষ যুক্ত হতে পারে।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে অসমতা ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। চলতি বছর জাকার্তায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন, বিশেষ করে কম আয়ের মানুষের দুরবস্থা নিয়ে— যার মধ্যে অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল চালক ও পণ্য পরিবহন কর্মীরা রয়েছেন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানির তীব্র সংকটে থাকা ইরানের রাজধানী তেহরান বর্তমানে ৯০ লাখ মানুষের শহর। সেখানে পানির রেশনিং চালু রয়েছে।

নতুন এই মূল্যায়নে শহরের সংজ্ঞা নির্ধারণেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। জাতিসংঘ জানায়, আগে বিভিন্ন দেশ নগর এলাকাকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করায় তথ্যের অসঙ্গতি দেখা দিত— এ কারণে নতুন পরিমাপ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।

নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো শহর বলতে বোঝানো হয়েছে, এক বর্গকিলোমিটার আয়তনের পাশাপাশি সংযুক্ত জনবসতি এলাকাগুচ্ছ, যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ১,৫০০ জন মানুষ বসবাস করবে এবং মোট জনসংখ্যা হবে কমপক্ষে ৫০ হাজার।

সূত্র: আল জাজিরা

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন